দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস (The Dark Knight Rises) ক্রিস্টোফার নোলানের করা ব্যাটম্যানঃডার্ক নাইট সিরিজের
সর্বশেষ ছবি। অসাধারণ এই সিরিজের শেষ পর্বের মুক্তি হবে ২০১২ সালের ২০ জুলাই।
বিশ্বব্যাপী এই ছবি দেখার জন্য মানুষের যে মুভি হলগুলোতে ঢল নামবে, তার কোন সন্দেহ নেই।
ওয়ার্নাস ব্রস পিকচারের এই ছবিটি আইম্যাক্স ফরম্যাটে মুক্তি পাবে বলে ইন্টারনেটে
বিভিন্ন ওইয়েবসাইটে দেখলাম। শুধু এই মুভি নয়, ইদানীংকাল মুক্তি পাওয়া রিয়াল স্টিল(২০১১),অ্যাডভেঞ্চারস্ অফ টিনটিন(২০১১),হ্যারি পটার সিরিজের বেশ কটি ছবি সহ প্রায় সব বিখ্যাত
বাণিজ্যিক ছবিই মুক্তি পাচ্ছে এই ফরম্যাটে। প্রশ্ন জাগে, এই আইম্যাক্স ফরম্যাট কি?
এই ফরম্যাটের ফিল্ম বেজ কোডাক(kodak) থেকে ধার নেয়া। সবচেয়ে নিখুঁত মাপের ESTAR ফিল্ম বেজ দিয়ে
এই ফরম্যাটের ফিল্ম রিল তৈরি হয়। রিলের
প্রত্যেক ফ্রেমে ১৫ টা করে স্প্রোকেট হোল আর ফিল্ম রিলের প্রস্থ ৭০ মিমি হওয়ায় একে ১৫/৭০
ফিল্ম বলা হয়। বিশাল প্রস্থের কারণে
অনায়াসে বড় সাইজের ইমেজ আর হাই রেজ্যুলুশনের ছবি ধারণ করা কোন ব্যাপারই না!
এখানে ফিল্ম রিল
কথাটা ব্যাবহার করা হয়েছে বোঝার সুবিধার জন্য। আসলে এই ক্ষেত্রে ফিল্ম রিলটা সাধারণ ভাবে পেচাঁনো হয়না, রাখা হয় বড়সড় প্ল্যাটারের ভেতরে। একটা আড়াই ঘন্টার
ছবিসহ প্ল্যাটারের ওজন প্রায় ২৫০ কেজির মতন হয়।
সাধারণ ক্যামেরাতে ফিল্ম লম্বভাবে লেন্সের পেছন দিয়ে চলতে
থাকে। এই ক্ষেত্রে তার উলটো; অনুভূমিক ভাবে (horizontal) একের পর এক ফ্রেম প্রবেশ করতে থাকে। আদর্শ ফ্রেম রেট (২৪ mm
) মেনে চলার খাতিরে ফিল্মে র দৈর্ঘের তিনগুণ রিল ক্যামেরার মধ্য দিয় pass
করাতে হয়। ক্যামেরা নিয়ে আরকদিন ভাল করে
লিখব।
বিশাল আকারের ক্যামেরা ব্যবহার করা হয় এই ফরম্যাটে |
প্রদর্শনের জন্য বিশেষ প্রজেক্টরের দরকার পড়ে।
প্রজেক্টরটির উন্নয়ন ঘটান উইলিয়াম শ’ । এই ভদ্রলোক একাধারে প্রজেক্টরের বিভিন্ন খুটিনাটি নিয়ে বিশদ গবেষণা করেন।
কালক্রমে তার এই প্রজেক্টরের বিবর্তন ঘটে। বর্তমানে চার ধরনের প্রজেক্টর দেখতে
পাওয়া যায়ঃ
1. গ্র্যান্ড
থিয়েটার
2. গ্র্যান্ড
থিয়েটার (ত্রিমাত্রিক)
3. এস আর (Small
Rotor)
4. এম পি এক্স
সম্প্রতি মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে আইম্যাক্স ফরম্যাটে ছবি
দেখানোর জন্য ডিজিটাল প্রজেকশন সিস্টেম রাখা হয় (যা কিনা বিতর্কের ঝড় উঠেছে)। এই
ব্যবস্থায় সাধারণ ফরম্যাটের ছবি
দেখানোর পর্দায়ই আইম্যাক্স
ফরম্যাটের ছবি দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়।
প্রজেকশন রুম |
বিশাল স্ক্রিনে ছবি দেখানো, আর সেই ছবি দেখানোর বিশাল বিশাল যন্ত্র- পুরো ব্যাপারটাই
আসলে সকলের জন্য একটা দর্শনীয় বিষয়। তাই আইম্যাক্স থিয়েটার গুলোতে সিনেমা
দেখানোর পাশাপাশি প্রজেকশন রুম এবং ক্যামেরাবাজির বিভিন্ন দিকগুলো সকলের কাছে
বোঝানোর সুবিধে থাকে।আসলে পৃথিবীর বড় বড় আইম্যাক্স হলগুলো বিভিন্ন সায়েন্স হল
কিংবা জাদুঘরগুলোতে থাকে। সেখানে সিনেমা বা ডকুমেন্টারী দেখার পাশপাশি এই
বিষয়গুলো সম্পর্কে অনেকেই জেনে নেন ভালভাবে।
পৃথিবীর সবচে’ পুরোন আইম্যাক্স ফরম্যাটে ছবি দেখার ব্যবস্থা আছে Reuben H. Fleet Science Center টিতে। এর প্রজেকশন পদ্ধতিও আলাদা। পুরো স্ক্রিনটা একটা অর্ধগম্বুজের মতন-ঠিক উপরে মাথার সামনের দিকে থাকে।
সেখানে বিশাল প্রজেক্টরের মাধ্যমে ছবি দেখানো হয়। প্রজেকশন রুম থাকে উপরের দিকের
সিটগুলোর ঠিক নিচে। গম্বুজের গায়েই স্পিকারগুলো লাগানো থাকে।অসাধারণ শব্দব্যবস্থার
সাথে সাথে বিশাল স্ক্রিনে দেখার অনুভূতি- পুরো ব্যপারটিই উপভোগ্য।
আইম্যাক্স প্রজেকশন হলের ব্যবচ্ছেদ |
এই ফরম্যাটের এইচডি ভার্সনও আছে। এক্ষেত্রে ফ্রেম রেট ৪৮
রাখা হয়, যা সাধারন ফ্রেম রেটের দ্বিগুণ। তবে এই ব্যবস্থায় আপনি সিনেমা দেখতে
পারবেন না। “অসাধারণ” রকমের খরচের কারণে এইচডি ফরম্যাট কেবল ডিজনি থেম
পার্কগুলোতেই রাখা হয়েছে, বিভিন্ন সিমুলেশ্যন রাইডগুলোতে ব্যবহার করা হয় কেবল,
অন্য কোথাও নয়।
মূলত এই পদ্ধতিতে ফিচার ফিল্ম (ডকুমেন্টারী, শর্ট ফিল্ম)
দেখানো হয়। এর মূল কারণ মূলত খরচ এবং দীর্ঘক্ষন ছবি না দেখাতে পারার অসুবিধা। তবে
২০০৮ সালে ডিজিটাল ফরম্যাটে ছবি দেখানোর
পদ্ধতি চালু করার পর বানিজ্যিক ছবিগুলোতে এর ব্যবহার বেড়েছে। ক্রিস্টোফার নোলান
ডার্ক নাইট ছবিতে ৩০ মিনিটের আইম্যাক্স ফরম্যাটের প্রিন্ট রেখেছিলেন, যা
কমার্শিয়াল ছবির জগতে ক্টা বড় ধাপ। এই ছবির সিকুয়্যলে ৫০ মিনিট আইম্যাক্স
ফরম্যাটের প্রিন্ট থাকবে, সেকথা তিনি ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন।
এশিয়ায় সবচে’ বেশি অমনিম্যাক্স থিয়েটার (আইম্যাক্স
থিয়েটার হল) আছে চায়নায়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ৬টা হল আছে বলে জানা যায়।তবে
কোলকাতায় মানি স্কয়ারে একটা আইম্যাক্স হল ২০১০ সাল থেকে বন্ধ আছে।
আর কিছু মাথায় ঢুকছে না। আজ এ পর্যন্তই । ভাল থাকুন।
এই লেখার সর্বস্বত্ব লেখকের ।এই লেখা লেখকের অনুমতি ব্যাতীত
প্রকাশ,মুদ্রণ,অনুলিখন কিংবা কোন রচনায় প্রকাশ করিলে লেখক আইনানুগ
ব্যাবস্থা নিতে বাধিত হইবেন।লেখকের মৃত্যুর পর লেখাগুলির সর্বস্বত্ব লেখকের
পরিবারের।