(সমতল থেকে এক বন্ধু কোথায় যেন চলে যাচ্ছে। আমি তার কাছে গেলাম। )
বন্ধু , তোমার লক্ষ্য কোথায়?
- ওই পাহাড়ের চূড়া।
সেখানে যাবে কিভাবে?
-কেন? পথ তো গেছে সেদিক দিয়েই...পথ ধরেই যাব।
পথে যে অনেক কাঁটা?
-কাটা তুলে নেব।
তাতে তো তোমার দেরী হবে, যেতে পারবে কি অতটা পথ?
-তা তো হবেই, দেরী হবে। তবে পথ তো চেনা।
পথের বাঁকের মায়াগুলো কাটাতে পারবে? আমাদেরকে ভুলতে পারবে?
-নাহ্ , তোমাদেরকে ভুলি কি করে? তোমরা তো আমার আপনজন।
তাতে তোমার পাহাড়ের বুকে ওঠার আরো দেরী হবে, পথের বোঝা আরো ভারী হবে...
-হয় হোক। তাতে যা পাব, সেটাই ঢের ভালো হবে।
আমাদেরকে ভুলে যাবে?
-কক্ষনো না!
(পাশে ফিরে দেখি, একজন ফিরে আসছে। হাতে-পায়ে ক্ষত। মুখে প্রশান্তির ছায়া, কিন্তু চেহারায় হালকা বিষণ্ণতার ছায়া।)
তুমি তো জয় করে ফেললে হে!
-(হেসে) ...তা বলতে পারো।
এখন তো তোমার অনেক আশা ফুরোল...
-ফুরোয়নি, আরো বেড়েছে। জমা হয়েছে অনেক।
মায়ের কথা মনে পড়ে?
-খুব।
বাবার কথা?
-জানো, কেন যেন মনে হচ্ছে বাবাকে এখন দেখলে চিনব না...।
ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব...
-আর বোল না ভাই, কান্না পাচ্ছে খুব।
কেন? এখন তোমার নজর নেবে সবাই, সবাই তোমাকে ভালোবাসবে, খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে, তুমি স্বনামধন্য হবে। জনে জনে তোমার নাম ধরে বলবে- "এই সেই মানবসন্তান, যে নিজের ভালোবাসাকে তুচ্ছ মনে করে, জগতের মায়া ছেড়ে ওই চূড়ায় ওঠার জন্য গিয়েছিল। এখন তোমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী, তুমি সফল, তোমার জীবন ধন্য!
-এই কষ্টের পরিণাম কি জানো? ভালোবাসাহীন একাকীত্বের জীবন। এখন আমি একা। শুধুই একা।
(সে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় সমতলে। সকলে তাকে দেখে আনন্দে মেতে ওঠে, উল্লাস করে। কিন্তু তার বিষণ্ণ চাহুনি আমার চোখে লেগে লেগে থাকে। বড্ড করুণ সে চাহুনি, বড্ড কালচে আর অভিমানী। )
এই লেখার সর্বস্বত্ব লেখকের ।এই লেখা লেখকের অনুমতি ব্যাতীত প্রকাশ,মুদ্রণ,অনুলিখন কিংবা কোন রচনায় প্রকাশ করিলে লেখক আইনানুগ ব্যাবস্থা নিতে বাধিত হইবেন।লেখকের মৃত্যুর পর লেখাগুলির সর্বস্বত্ব লেখকের পরিবারের।