Sunday, March 6, 2011

দুর্ঘটনা অথবা দুঃস্বপ্নের গল্প


Night terrors are something quite different. Nightmares tend to occur after several hours of sleep, screaming or moving about is very uncommon, the dream is usually elaborate and intense, and the dreamer realizes soon after wakening that he or she has had a dream. Night terrors, on the other hand, occur during the first hour or two of sleep, loud screaming and thrashing about are common, the sleeper is hard to awaken and usually remembers no more than an overwhelming feeling or a single scene, if anything. Nightmares and night terrors arise from different physiological stages of sleep.


১.
 
আজকাল আমার ভীষণ মাথাব্যথা করছে। চিনচিন করে ব্যথা। দুটো, তিনটে, চারটে প্যারাসিটামল খেলেও কোন কাজ হচ্ছে না। ডাক্তার দেখালাম,  দেখে বললেন,  “কই, তেমন কোন সমস্যা তো দেখছি না...।” দুটো ওষুধ লিখে দিলেন। “এগুলো পেইন কিলার, ব্যথা হলে খাবেন।” আজ দু-সপ্তাহ হয়ে গেল, ওষুধ খাওয়াই সার...ব্যথায় কাতর হয়ে আমি যেন নরকবাস করছি।
 
আজ রাতেও আমার মাথাব্যথা শুরু হল। প্রচণ্ড ব্যথায় মাথা ঠুকে মরতে মন চাইলো। টঙ্গীর ব্যস্ত অলিগলির মাঝে বিষময় যান্ত্রিক কোলাহল আর মেসের লোকজনের সপ্তাহ-শেষের আড্ডার হাস্যরস আমাকে পাগল করে তুলল। উপায়ান্তর না দেখে আমি মেস থেকে বের হলাম, আমার আর ভালো লাগছিলো না।
 
গলি থেকে হাইওয়ের দিকে যেতে লাগলাম। এক একটি পা ফেলছি আর মনে হচ্ছে মাথার ভেতর অবিরাম গতিতে হাতুড়ীর বাড়ি পড়তে লাগলো। মোড়টা পেরিয়ে তুরাগের  পাড়ের দিকে এলাম। এদিকটায় আগে জনবসতি ছিল না। ভুমিদস্যুদের ধর্ষণে এ তুরাগ আজ কেবল রিক্তই হয়নি, ধীরে ধীরে নিজের মৃত্যুও ঘোষণা করছে। 
 
আমি হাঁটতে হাঁটতে তেমনি একটা বালুময় দস্যু-প্রকল্পের দিকে এগুতে লাগলাম। ঠাণ্ডা বাতাস, ভাবলাম, হয়তো এখানকার বাতাস আমার ভালো লাগবে।
“হাঁটতে বেরিয়েছেন?”


 
পিছন থেকে প্রশ্নটা এলো। তাকাতেই দেখি একজন দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকার থেকে তেমন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না  চেহারাটা। লুঙ্গি আর ফতুয়া পরা। ভাবলাম, আশেপাশের এলাকার কেউ হবে হয়তো।
আমি প্রশ্নটার জবাব দিলাম না। চুপচাপ হাঁটতে লাগলাম।
 
“ভাইসাব কি রাগ করলেন?”
“অযথা রাগ করবো কেন? দেখেন ভাই, মাথায় অনেক ব্যথা। কথা বলতে ভালো লাগছে না।“
“রাগ কইরেন না ভাই। রাগ করলে জ্বালা আরও বাড়বো, কমব না।“
 
লোকটা আর কথা বাড়াল না। তবে পেছন পেছন আসতে লাগল। আমি যত দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করি, লোকটা তত জোরে হাটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে মেইন রোডে উঠে পড়লাম। মেইন রোড। ময়মনসিংহ রোড । বাসগুলো শোঁ-শোঁ করে চলে যাছে।পথে আর কোন আলো নেই, তাই বাসগুলো চলে যাবার পর আবার অন্ধকার।
 
অনেকক্ষণ হাঁটলাম। পেছনে আর ওই লোকটাকেও দেখতে পেলাম না। চলে গেছে মনে হয়।হঠাৎ করে চলে যাওয়াতে একটু অবাক হলাম বটে, তবে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। মাথা ব্যথাটাও কমে যাচ্ছে মনে হয়। বাসায় অবশ্য যেতে ইচ্ছে হল না। আমি আরও কিছুক্ষণ হাঁটতে লাগলাম।
 
যেতে যেতে দেখলাম একটা মেয়ে...বয়স দশ-বারো বছর হবে। আস্তে আস্তে কাঁদছে। এইখানে মেয়েটা একা একা কাঁদছে কেন? “এই মেয়ে কাঁদিস কেন? তোর বাড়ি কই?”
 
"জানি না...”
“জানিস না মানে? কার সাথে এসেছিস?”
“বাজানের লগে, মায়ের লগে...”
“ও। তারা কই...?”
“জানি না...”, মেয়েটা আরও জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।
 
চিন্তায় পড়লাম। মেয়েটা এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে? আশেপাশে এমন কাউকে দেখছি না যে বললে সাহায্য করবে। কি করব, নিয়ে যাব? পুলিশের কাছে নিয়ে গেলে হয়তো...
 
“মরিয়ম...? মরিয়ম...?”
“ওই তো আমার মায় আইসা পড়ছে...,” বলেই মেয়েটা একটা মহিলার  কাছে ছুটে গেল। বাচ্চাটাকে মহিলা কোলে নিলেন। ঘোমটা দেয়া মুখ...আজকাল এরকম কেউ ঘোমটা দেয় নাকি !
 
মহিলাটাকে একটু ঝাড়ি মারার চেষ্টা করলাম। “ কি ব্যাপার? মেয়েকে রেখে অন্য জায়গায় যান কেন?”
জবাবে মহিলা একটু হাসল বলে মনে হল। বলল, “একটু সামনে গেছিলাম ভাইজান, ওর বাপ না বইলা কোথায় জানি গেল...”
“ও”। তাহলে আপনারা দেখছি সবাই মিসিং কেস, মনে মনে বললাম। জিজ্ঞেস করলাম, “কোথায় থাকেন?”
জবাব দিল কিনা বুঝলাম না। তবে বিড়বিড় করতে লাগলো। আবার জিজ্ঞেস করলাম , “এই যে, আপনি যাবেন কোথায়?”
 
“বহু দূর ...আপনে চিনবেন না...”
“চিনব না মানে? বলেই দেখেন না...”
“না ভাইজান...চিনবেন না।”,  মহিলা আরও বড় ঘোমটা দিলেন।
 
বোঝা গেল মহিলা কিছু বলবেন না । যাগ্‌ গে, না বললে আমার কি? আমি আবার আপ মনে হাঁটতে লাগলাম।
 
গাড়ি-টাড়ি অনেকক্ষণ ধরে দেখছি না। রাস্তায় আলোও নেই। হাইওয়ে ধরে অনেকদূর এসেও পড়েছি। ফিরে যাব? নাহ্‌ আজকে হাঁটতে ভালোই লাগছে। সামনে একটা বাজার থাকার কথা। বাজার থেকে একটা রিকশা নিয়ে বাসায় গেলে মন্দ হবে না।আর মেসে ফিরে গেলে আমার আবার দম বন্ধ হয়ে আসবে। তারচে’ একটু হাঁটা যাক।
 
দুমিনিট হাটার পর দেখি আবার ওই মহিলা। সাথে সেই লোকটা, একটু আগে যার সাথে দেখা হল। তারাই কি? হ্যাঁ, ঠিক এদেরকেই দেখেছিলাম।কিন্তু এরা এখানে কি করছে? এদেরকে না আমি পিছনে ফেলে আসলাম? আর এই মহিলা...এর সঙ্গে কেন?
 
"ভাইজানের রাগ কি কমেছে?"
"আপনি এখানে কি করছেন?"
 
কিছু বলল না লোকটা, একটু হাসল। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, “আরে ভাই প্রশ্নের জবাব দেন না কেন? আপনি এইখানে কি করেন?” আপনাকে না দেখলাম একটু আগে , এখানে আসলেন কি করে? আর ইনি আপনার কে হন?”
 
আবার হাসি? আশ্চর্য ! হাসে কেন লোকটা? আমার একটু রাগ হতে লাগলো।  অনেকক্ষণ হাসার পর মহিলাকে দেখিয়ে বলল, “উনি আমার স্ত্রী । আর মরিয়ম আমার কন্যা”।
 
“বুঝলাম। তা আপনারা এইখানে কেন?”  
“ভাইসাহেব, বড্ড বিপদে পড়েছি...মস্ত বিপদ”।
“বিপদ? কিরকম?”
“সেটা একটুখানি পরেই দেখবেন...মরিয়ম...? অ মরিয়ম...কই গেলি রে মা...?”
 
মরিয়ম কোত্থেকে জানি এসে হাজির হল । উড়ে আসল নাকি! আমার একটু ভয় ভয় করতে লাগলো । ঠাণ্ডা বাতাস কোন দিক থেকে যেন বইছে...শীতে হাত পাও কাঁপাকাঁপি অবস্থা। কি হচ্ছে এসব...?
লোকটা একটু হাসল। “ডরাইয়েন না সাব। ডরান কেন?”
 
মহিলাটাও হাসতে লাগল, “দেখেন, সাহেবে ডরায়! ও মরিয়ম,দ্যাখ দ্যাখ, সাহেবে ডরাইতেছে...”
তিনজনের হাসিতে আতংকিত হয়ে পড়লাম। হাত-পা জমে গেল।তাকিয়ে রইলাম তাদের দিকে। হঠাৎ করে একটা আলো দেখলাম। কিসের আলো?
 
একটা বাস শোঁ-শো করে ভয়ানক গতিতে ছুটে আসছে। চারপাশ হঠাৎ যেন জেগে উঠলো মৃদু চিৎকারে, কোলাহল আর কান্নায় আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠলো। লোকটা হাসি থামাল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, 'ভাইজান আসি। আবার দেখা হবে'।
 
এই প্রথম লক্ষ্য করলাম লোকটার মুখ। লোকটার মুখে কোন চামড়া নেই, শুধুই কংকাল।
মহিলাটির ঘোমটা বাতাসে পড়ে গেল। একি দেখলাম!
 
মহিলাটির, এমনকি রহিমার মুখটিও কংকাল...শুধুই করোটি।
 
“বিদায় ”, বলেই হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়লো তারা বাসের নিচে । আমি হতবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। বাসের চাপায় কংকাল ভাঙ্গার মট্‌মট্‌ শব্দ হল। আমি চিৎকার করে উঠলাম, “... বাঁচাও!”

২.
 
“কিরে লাটসাহেব, ঘুম ভাঙল?”
 
ঘুম থেকে উঠলাম। সজীব চা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। চা খেতে খেতে পত্রিকাটা আমার হাতে দিয়ে বলে, “কালকে তো শালা আটটার সময় ঘুমালি। আর এখন বাজে ১০ টা। অফিসে যাবি না?”
“নাহ্‌ আমার মাথাটা...” আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার মাথা ব্যথাটা সেরে গেছে।
“কি বললি?”, সজীব চা খেতে খেতে বলে।
“হুম...? নাহ্‌ কিছু না”।
 
 আমি পেপারটা হাতে নেই। এবং নিয়েই থমকে যাই।
 
প্রথম পাতার শিরোনামটা এরকম কেন?

 “ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে বাস চাপায় একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু”।

                                     


 
                                      




 এই লেখার সর্বস্বত্ব লেখকের ।এই লেখা লেখকের অনুমতি ব্যাতীত প্রকাশ,মুদ্রণ,অনুলিখন কিংবা কোন রচনায় প্রকাশ করিলে লেখক আইনানুগ ব্যাবস্থা নিতে বাধিত হইবেন।লেখকের মৃত্যুর পর লেখাগুলির সর্বস্বত্ব লেখকের পরিবারের।

ঘুমনামা

মাঝে মাঝে মনে হয় আমি একা বসে আছি। একটা খালি মাঠের এক কোনে, বিলের পাশের নিচু ঢালে। শুয়েও পড়তে পারি, যদি ইচ্ছে হয়। তারপর কি করব জানি না। আমি অ...