Sunday, October 24, 2010

চিরচেনা... চিরঅচেনাঃ পর্ব-৪

                                        ...............।৪।..............


অন্তু সদরঘাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

এই জায়গাটা একসময় খুব ভালো লাগতো। সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা লঞ্চ-স্টীমার, পাচঁ মিনিট পরপর বিকট শব্দ...পোঁওওওও..., আর হাজার হাজার মানুষের হাজার রকমের ব্যস্ততা।হাজার রঙ্গে বোনা এখানকার প্রতিটি মুহূর্তগুলো সদরঘাটের এই মাল্টিকালার বৈচিত্র না থাকলে এই পুরোন ঢাকার ইতিহাসটাই ঢাকা পড়ে যাবে।

অনেক গরম পড়েছে। অন্তু ইতিমধ্যে দুটো ডাব খেয়ে ফেলেছে, আরেকটা খাবে কিনা ভাবছে। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতেও ভালো লাগছে না তার। যাবে নাকি কোথাও? স্টীমারে যেতে অন্য রকম একটা মজা আছে, অন্তু সেটা গতবার স্টাডী ট্যুরে গিয়েই বুঝেছে। সামনের ডেকে উঠে বাতাস খাওয়া, মাঝে মাঝে দু-এক কাপ চা খাওয়া...আর আশেপাশের দৃশ্যগুলোর ছবি তো মুফ্‌ত ।কম খরচে অনেক মজার একটা ভ্রমন।

আজ অবশ্য মজা লাগছে না। সকালে ফোন বন্ধ করার পর সিমটাও খুলে ফেলে দিয়েছে সে। বাসার সাথে যোগাযোগ রাখতে চায় না। অন্তত কিছুদিনের জন্য সব ভুলে যেতে চায় অন্তু। এমন কোথাও যেতে চায় যেখানে তাকে কেউ অন্তত খুঁজে পাবে না।

এখানে অবশ্য আকে খুঁজে পাওয়াটা সোজা। বাপি ইচ্ছে করলেই বের করতে পারবে সে এখানে এসেছিলো কিনা। তাতে অন্তুর আপত্তি নেই। বের করতে চাইলে করুক, কোথায় যাচ্ছে, তাও জানুক, কিন্তু তাকে বাসায় ফিরে না যেতে বললেই হবে।ওটা আর তার জন্যে বাসা নয়, নরকখানা।

গেটে দিয়ে ঢুকলো অন্তু। এক টাকা ভাংতি পাবে কোথায় গেটম্যান, তাই পুরো পাঁচ টাকাই নিয়ে নিল। ভিতরে ঢুকেই বাকি টাকা গুলো পকেটে ঢুকাতে যাবে, এমন সময়...
' স্যরি...'
' স্যরি আমি...আরে ! আপনি? '
' হ্যা...কিন্তু তুমি এখানে...কি করে...'
'আমি আজকে বাসায় যাব।আমার বাড়ি চাঁদপুর ।'
' ও।'
' কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন? ' 
' আমি? আমি...' কি বলবে অন্তু? বিস্ময়ের ধাক্কাটাই কাটছে না এখন পর্যন্ত। এই মেয়েটার সাথে তার দেখা হলো মাত্র দুই দিন, কিন্তু এই দুই দিনই একেবারে বাস-ট্রাক সংঘর্ষ ! এখনো বুঝতে পারছে না অন্তু কি বলবে।'...আমি এমনিতেই এসেছি...তেমন কোন কারণ নেই...'
' অ। আমি ভাবলাম কোথাও যাবেন হয়তো...' ব্যাগটা টানতে টানতে বললো।ভারী মনে হচ্ছে ব্যাগটা। একটু হেল্প করবে নাকি...? না,থাক। পর মুহূর্তেই আবার...
' আমি ব্যাগটা ধরবো? '
' না না, আমি পারবো।'
' অ।' একটু হাঁপ ছেড়েই বাচলো অন্তু । ব্যাগ টানার কথা বলেই নিজে একটু লজ্জাই পেল। এটা কেন বলতে গেল? ওতো নিজেরটা নিজেই টানতে পারছে, তাই না?
লঞ্চ ঘাটে এসে পড়েছে। এই লঞ্চেই যাবে মেয়েটা? 
' আমি তাহলে আসি। '
'আচ্ছা, আবার দেখা হবে।'
'তাতো হবেই, কলেজে তো যাবেন, তাইনা?'
'হ্যা, হবে নিশ্চয়ই। বাই...।'
' বাই।' বলে কেন যেন আনমনেই হাসলো মেয়েটা। অন্তু খেয়াল করলো না। কিছুক্ষন পর অন্তুও হেসে উঠলো। কেন হাসলো দুজনের কেউ কি জানে?


                                  ............।৫।............

লঞ্চের টিকিট কাউন্টারের বসে থাকা মৌলভী মতন লোকটা অনিমাকে চেনে। প্রথমবার আসার সময় বাবা পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো।'এটা ভাই আমার মেয়ে, ঢাকায় পড়াশোনা করে। আপনাদের এই লঞ্চেই আসা যাওয়া করবে। আসা যাওয়ার পথে একটু খেয়াল রাইবেন।'
বিগলিত একটা হাসি দিয়ে লোকটা বলেছিলো, 'চিন্তা করবেন না ভাই সাহেব। আপনার মেয়ে তো আমাদের মেয়ের মতোই। কোন সমস্যা নাই, আমি খেয়াল রাখবো।এক ফোঁটা আচঁড় ও লাগবে না"।এরপর থেকে এই লঞ্চে উঠলে এই লোকটা ক্রমাগত বিরক্ত করে। কারণে-অকারণে এসে  কেবিনে বসে। বকবক করে মাথা ধরিয়ে দেয় ।''মা তোমার কি লাগবে বলো, আমি তোমাকে এনে দেব।'
'আমার কিছু লাগবে না চাচা।'
'লাগবে লাগবে। এই দুনিয়ায় মেয়ে মাইনষের সবচেয়ে বেশি জিনিষপাতি লাগে। আওরতের চাহিদা ছিলো বইলাই তো আমরা দুনিয়ায়, তাইনাগো মা জননী...?'
'এখন কিছু লাগবে না, লাগলে আমি আপনাকে বলে আসবো।'
'আইসো, আইসো।চিন-পরিচিতের মধ্যে কেউ না থাকলে আর কারো কাছে কইয়ো না মা। লঞ্চের মানুষগুলা ভালো না। এরা গন্ধে গন্ধে আসে, গন্ধ শুইকা চইলা যায়। কারো লগে মিশবা না মা্‌, আমি তো আছিই...'

আজকেও ঠিক একই রকম অবস্থা। দেখেই যেই একটা হাসি দিলো, তাতে পারলে যেন বত্রিশ দাঁতের সবগুলো বের হয়ে আসবে। পানের পিক ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। 'কেমন আছো মা, ভালো...?'
'হুম। একটা টিকিট দিন, কেবিনের দিবেন।'
'কেবিনের টিকিট তো নাই।'
'নাই?'
'না মা, আজকে লঞ্চ পুরাই ভর্তি।পাবলিক এক ঈদ বাদে এমন ভীড় করে না। আজকে মানুষের কোন গোনা-গুণতি নাই, সব উইঠা পড়ছে।'
কি করবে এখন অনিমা? যাওয়াটা খুব দরকার, মার অসুখ আবার বেড়েছে। বাবাকে কালকে খুব বিষণ্ন শোনাচ্ছিলো।"তোর মার অপারেশন করানোটা খুব জরুরীরে অনি..."

'কেন আব্বা, আর কয়েকদিন পরে করানো যায় না? মিন্টু চাচা কি বললো?'
'কি আর বলবে, বললো এবার চিকিৎসা না করতে পারলে তোর মা হয়তো...'
'ও। বাবা,একটা কথা বলি?'
'বল।'
'উত্তর পাড়ার জায়গাটা বেঁচে দিলে হয়না ?'
'ওটাতো কবেই...। '
লাইনটা কেটে গিয়েছিলো। সম্ভবত মোবাইলে টাকা নেই।অনিমা আর কিছু না বলে আজকে বাসায় যাবার সিদ্ধান্ত নিল। আর আজকেই কিনা ঢাকা শহরের সব মানুষকে এই লঞ্চে উঠতে হবে?

'একটা কেবিন কোনভাবে ম্যানেজ করা যায় না ?'
'ম্যানেজ...হ্যা' আবার একটা হাসি দিলো আইজুদ্দিন।'আছে, একটা আছে ঠিকই।'
আছে? কোনটা চাচা? কত লাগবে ?
'ইয়া আল্লাহ, মেয়েটা বলে কি?'জিহবায় কামড় লাগায় সে। 'তোমার জন্যে টাকা লাগবে কেন? তুমি এমনিতেই যেতে পারবা...পুরাই ফ্রি !'
'মানে?'
'মানে আবার কি? আমার একখান রুম আছে না...?ওইখানে থাকলেই হবে, কোন সমস্যা হবে না...'
আবার শুরু হয়ে গেলো। 'না চাচা।অনেক ধন্যবাদ, আমার লাগবে না।'

'আহা, এমন কর কেন...রাগ করলে চলে ? কোন সমস্যা হবে না, তুমি আমার রুমে থাকবা...।'
'না। আমি কোন একটা ব্যাবস্থা করে নিতে পারব,' বলে দ্রুতপায়ে সেখান থেকে চলে গেলো। লোকটাকে দেখতেই তার এখন অসহ্য লাগছে।

দোতলায় চলে গেলো অনিমা। এখানে সবাই নিচে পাটি- চাদর পেতে বসে। তার এলাকাটা ছোট, খুব সহজেই পরিচিত কাউকে পেয়ে যাবে।ওইতো যুঁথি আপারাই তো ওখানে বসে আছে।অনিমা তাড়াতাড়ি ওদের ওখানে চলে গেল।

'আপা কেমন আছেন?'
'আরে অনিমা যে? কেমন আছিস?'
'এইতো আপা। বাড়ি যাচ্ছো ? '
'নারে...বাড়ি এবার উঠবো না, শ্বশুড় বাড়ি উঠবো। আমার ছোট ননদের বিয়ে, তাই ছুটি নিয়ে যাচ্ছি।এইযে দেখছিস না রেলিং এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে? এ হচ্ছে আমার বড় ভাসুর। ডাক্তার মানুষ, চর্মরোগের ডাক্তার। ঢাকায় চারটা বাড়ি। পাশে যে দেখছিস হ্যাংলা করে ছেলেটা, ওটা আমার বরের চাচাত ভাই।আজকাল কিসব গান গায়, কিচ্ছু বুঝি না ছাই!...'

কান ঝালাপালা হয়ে গেল অনিমার।পুরো রেলিং জুড়েই খালি এতো আত্মীয়!। না বসাই তো ভালো ছিলো !
"তারপর দেখছিস না ওই ছেলেটা ওটা হচ্ছে...আরে? এটা না, এটা কেউ না।তারপর যে আছে..."

কিন্তু যে যুথি আপার কেউ না, তার দিকেই চোখ আটকালো অনিমার।

এই ছেলেটা লঞ্চে কেন?
                                                                                       (চলবে)


 


(এই লেখার সর্বস্বত্ব লেখকের ।এই লেখা লেখকের অনুমতি ব্যাতীত প্রকাশ,মুদ্রণ,অনুলিখন কিংবা কোন রচনায় প্রকাশ করিলে লেখক আইনানুগ ব্যাবস্থা নিতে বাধিত হইবেন।লেখকের মৃত্যুর পর লেখাগুলির সর্বস্বত্ব লেখকের পরিবারের।)

Monday, October 18, 2010

চিরচেনা...চিরঅচেনাঃ পর্ব-২

                                              ||--------৩-------||

আজকে সকাল বেলাতেই এত রোদ উঠে গেলো ! সারাদিনে তাহলে কি হবে? এইসব ভাবতে ভাবতে যখন ঘড়িটার দিকে চোখ গেলো তখন অন্তু তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো। দশটা বাজে ! বড্ড দেরী হয়ে গেল... আজকে সে ক্লাসে যেতে পারলো না । মম তো একবার হলেও উঠিয়ে দিয়ে যায়...

কিন্তু মম থাকলে তো বাপির সাথে কথা কাটাকাটি হতো।
মম কোথায়? কাল বাড়ি আসে নি?

"আজম চাচা ! আজম চাচা !" ডাকতে ডাকতে অন্তু নিচে নেমে আসলো। বাপির গাড়ি নেই,তারমানে বাপি অফিসে চলে গেছে। কিন্তু মমের গাড়ি তো নেই। ওয়েট, শফিক ভাই তো ঠিকই আছে...তাহলে মম গাড়িসহ আবার কোথায় গেলো?

আজম গাছে পানি দিচ্ছিল।ডাক শুনে কলটা বন্ধ করে দিয়ে ভিতরে গেলো। হাতটা মুছতে মুছতে বললো, "উঠেছ তাহলে?আমিতো ভাবলাম একবার গিয়ে জাগিয়ে আসবো নাকি..."

"মম কোথায়?"

কি যেন চিন্তা করলো আজম।এক মুহূর্ত ভেবে বললো," তোমার মা অফিসে।"
"কিন্তু শফিক ভাই তো বাসায়।"
"তোমার মা একাই গাড়ি নিয়ে গেছেন।"বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো আজম।
অন্তুর ভয়ানক রাগ হলো। "আজম চাচা, আমার দিকে তাকাও।"আজম তার দিকে তাকাল।
"মম কোথায় ? সত্যি করে বলবে।"
"আমি জানি না অন্তু। আমাকে জিজ্ঞেস কোর না, আমি জানি না।"
অন্তু আর কিছু বলল না। নিজের ঘর চলে গেলো। বাপিকে ফোন করতে হবে, বাপিকেই জিজ্ঞেস করতে হবে।

মোবাইলে বাপির নাম্বারটা রাখে না অন্তু। কিন্তু এই নাম্বারটা অন্তুর সবসময় মনে থাকে। কেন সেভ করে না সেটা সে নিজেও জানে না।কিন্তু সেভ করে না।

"হ্যালো, আশরাফ স্পিকিং..."
"বাপি, মম কোথায় গেছে?"
"অন্তু? নাস্তা খেয়েছ?"
"মম কোথায় বাপি?"

আশরাফ কিছু বললেন না। আসলে কি বলা দরকার সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না।বলে দেয়াটাই ভালো। নিজের আত্মপক্ষ সমর্থন করাটা উচিত। ছেলেটার বোঝা উচিত যে তার কোন দোষ নেই।

"বাপি, কথা বলছো না কেন? মম কোথায়?"
"তোমার মম লন্ডনে তোমার নানুর কাছে চলে গেছে।"
"ও।"
"আজ সকালে চলে গেছে।"
"ও। আমি রাখি।"
"অন্তু তোমার জানা দরকার সন্ধ্যা কেন চলে গেল..."
"বাপি প্লিজ। আমি রাখলাম।"

অন্তু কিছু অনুভব করে পারলো না তেমন। একটা ভোঁতা অনুভূতি...তেমন কোন কিছুর কথা ভাবতে ভালোও লাগছে না। মোবাইলটা বাজছে...সম্ভবত বাপি আবার ফোন দিয়েছে। অন্তু ফোনটা বন্ধ করে রাখলো।তার এই বাড়িটা অসহ্য লাগছে। বিছানা থেকে উঠলো অন্তু। তার ট্রাভেলার্স ব্যাগটা বের করলো। দু-চারটা গেঞ্জি,টি-শার্ট, জিন্সের প্যান্ট আর খাতা-কলম নিলো। টেবিল থেকে প্রিয় এস.এল.আর টা বের করলো। স্নিকার্সটা পড়লো। মানিব্যাগে যা আছে, তা দিয়ে এক মাসের খানা- খরচ হয়ে যাবে...সব টিফিনের টাকা।ও, ভালো কথা ল্যাপটপ টা খুললো অন্তু। মাকে একটা মেইল দিবে সে। দুটো লাইন লেখা মাত্র।তারপর ? হাওয়া হয়ে যাবে সে।একেবারে হাওয়া।



(এই লেখার সর্বস্বত্ব লেখকের ।এই লেখা লেখকের অনুমতি ব্যাতীত প্রকাশ,মুদ্রণ,অনুলিখন কিংবা কোন রচনায় প্রকাশ করিলে লেখক আইনানুগ ব্যাবস্থা নিতে বাধিত হইবেন।লেখকের মৃত্যুর পর লেখাগুলির সর্বস্বত্ব লেখকের পরিবারের।)

Sunday, October 17, 2010

চিরচেনা... চিরঅচেনাঃ পর্ব-১

                                               ||---------১---------||



অন্তুর মাঝে মঝে মনে হয় সকাল বেলাটা আসলে সকাল না হলেই ভালো হতো। কারণ এই একটা সময়েই বাপি-মম একজন আরেকজনের মুখ দেখেন। ঘুমের বারোটা বাজে, কিছু না খেয়েই কলেজে যেতে হয় (সামনে পড়লে ঝগড়াটা ওকে নিয়েই শুরু হয় বলে সে তাদের সামনে যাওয়াটাই আজকাল বাদ দিয়েছে) ।একটা দুটো ক্লাস করে বের হয়ে যায়,চুপচাপ কোন একটা পার্কে গিয়ে বসে থাকে।

ওইদিন রাশেদ স্যার ওকে দেখেছিলেন পার্কের ভিতর। কিছু বলেননি সেদিন। পরদিন ক্লাস শেষে জিজ্ঞেস করেছিলেন ওখানে কি করছিলো সে। "আরো দুটো ক্লাস ছিলো না তোমার?"

"জ্বি স্যার।"
"করো নি কেন?"
 কিছু বললো না অন্তু।

চশমাটা খুলে রুমাল দিয়ে মুছতে লাগলেন স্যার।"শোন, এই বয়েসটাতে একটু মন খারাপ হবে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু ক্লাস করলে বন্ধুরাও তো তোমার সাথে থাকবে, ওদের সাথে তোমার কথা শেয়ার করতে পারো, তাই না?"
কিছু বললো না অন্তু। এই কলেজে ভর্তি হবার পর তার সাথে কারোই বন্ধুত্ব হয় নি। না হওয়াটাই স্বাভাবিক, সে আসলে নিজেই একটু একা থাকতে চায়।
অন্তুর কাঁধে হাত রখলেন তিনি।"আর এইরকম করো না। তোমার গার্জেনকে একটা ফোন দিতে বলবে।"
"আচ্ছা।"। কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় ক্লাস শেষ হবার পর আবার বের হয়ে গেল অন্তু।

ক্লাস করতে যে ভালো লাগে না তা কিন্তু নয়; ভালোই লাগে। কিন্তু তার সে আসলে এত মানুষের মাঝে ক্লাস করতে গিয়ে কেমন যেন একটা হিংসা বোধ করে...একটা ক্ষোভ কাজ করে অন্তুর মনে। ভাবে, এত মানুষের মতো আমি হলাম না কেন? অপুর ফোন্টা কাজ করছে না, কান্তার গানের মাস্টারের সাথে ওর মন দেয়া-নেয়া চলছে, রাসেলের গিটারটার তার খুজেঁ না পাওয়া কিংবা আদনান কোন কারণে একা একা বসে কাদছে...এসবই তাকে দারুণ একটা ক্ষোভের উনুনে চড়িয়ে দেয়। সে জানে, তার এইসব সমস্যা হয় না। ফোন কাজ না করলে বাপি ফোন কিনে দেবে, মম একটা দামী গিটার কিনে দিবে না চাইতেই...আর সবচেয়ে বড় কষ্টটা হল-সে সহজে কাদঁতে পারে না।

প্রতিদিনের মতো আজও বাংলা ক্লাস শেষ হবার পর অন্তু বেরিয়ে যাচ্ছিল। আজ অবশ্য ছুটি হয়ে যেত...ফার্স্ট ইয়ারের নবীণবরণ হবে,তাই সবার আজ ছুটি । আজ কোথায় যাবে ভাবতে লাগলো সে।একবার ভাবলো একটু পুরোন ঢাকায় যাবে, তার খালার বাড়িতে বহুদিন যাওয়া হয় না। আবার ভাবলো গেমস্‌ জোনে চলে গেলেও হয়...নতুন গেমস্‌ এসেছে...।এইসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ...

"স্যরি...আমি দেখিনি..."
"না না, ঠিক আছে..."

ঠিক কি আছে? মেয়েটার শাড়িটা নোংরা হয়ে গেছে...মেয়েটাও মনে হচ্ছে বেশ ব্যাথা পেয়েছে।ধরে-টরে উঠালো অন্তু। মেয়েটা শাড়িটা হাল্কা ঝেড়ে দাড়ালো। অন্তু কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না। চলে যাওয়াটাই ভালো, এই ভেবে গেটের দিকে রওনা দিলো।

"এই যে, শুনুন?"
 আবার কি হলো? ধুৎ, এসব ভালো লাগে না তার।
"আমাকে বলতে পারবেন  সেন্টার হলরুমটা কোন দিকে?
"বায়ে গিয়ে সোজা প্যাসেজ ধরে গেলেই হলরুমটা দেখতে পাবেন।"
"আচ্ছা, ধন্যবাদ।"

মেয়েটা হলরুম খুঁজলো কেন? ও...ফার্স্ট  ইয়ার হবে। এই জন্যই তো শাড়ি পরেছে। মম আগে যখন শাড়ি পড়ে অন্তুকে নিয়ে বাইরে যেতো, তখন তার খুব ভালো লাগতো। এখন কেন যে শাড়ি পড়ে না, কে জানে...

                                      ||----------২-----------||

রাতে শোবার আগে অন্তু একবার করে একটু তার কবিতার বইগুলো একটু পড়ে। তার কবিতা পড়তে খুব ভালো লাগে। আবৃত্তি ক্লাস করতে গিয়েছিলো কয়েকদিন, কিন্তু পরে আর যাওয়া হয়নি। বাপি অবশ্য এতে খুশিই হয়েছিলো।"মানুষ কতো রকমের কাজ করে, আর তুমি কবিতা আবৃত্তি চর্চা করছো? ভালোই হলো, এখন থেকে তুমি পারলে গিটারটা শেখার চেষ্টা কর, ওইদিন রহমানের ছেলেটা গিটার বাজিয়ে শোনালো, কি সুন্দর melody..."

আজ আর কবিতা পড়তে ভালো লাগলো না। একটু শরীরটাও খারাপ, সর্দিজ্বর-টর হবে হয়তোবা। লাইট নিভিয়ে চাদরটা মুড়ি দিইয়ে শুয়ে পড়লো অন্তু।

অবশ্য ভালো না লাগার একটা অন্য কারণও আছে। অন্তুর নিজেরও একটু বিরক্ত লাগছে। অযথা একটা মেয়েকে মনে রাখার কোন মানে আছে? আচ্ছা, স্যরি নাহয় আরেকদিন বললেই তো হবে ,তাই না? সেদিন আসার পথে শুনলো রাসেল কোন মেয়েকে আন্টি বলার কারণে ইয়া বড় এক চড় খেয়েছে। সেও যদি খায়?

হঠাৎ গাড়ির শব্দ। বারোটা বাজে, তারমানে বাপি এসেছে। মা আজ একটু আগেই এসে পড়েছিলো...এসে হড়হড় করে বমি করে ঘুমিয়ে পড়েছে।এরা যে কি কারণে ড্রিংকস্‌ করে...!
এসিটা অফ করে অন্তু ঘুমিয়ে গেল।

(চলবে)

Wednesday, October 6, 2010

...এক স্টেশন মাস্টারের গল্প।

রাত দশটা বাজে। । সকাল বেলা ভোর পাঁচটায় আন্তঃনগর আসবে। তার আগে আজ রাতে আর কোন ট্রেন নেই। চাদরটা যে কোথায় রখেছেন তা ভাবতে ভাবতেই রফিক সাহেব অনুধাবন করলেন যে তার চশমাটা কোথায় রেখেছেন তা ভুলে গেছেন।আজকাল চশমাটা না থাকলে তার বড় সমস্যা হয়।

জোলেখা বেগম বেচে থাকলে তার হয়তো এই সমস্যাটা হতো না। তিনি নিশ্চই চশমার সুতাটা বেধে দিতেন। স্বামীর কষ্ট মনে হয় এই মহিলাই বোধহয় সবচেয়ে বেশি অনুধাবন করতেন। বেঁচে থাকতে যত কষ্টই হোক না কেন তার দুপুরের খাবার ষ্টেশনে পৌছে যেত। যেদিন জোলেখা মারা গেলো সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত কেউ তাকে দুপুরের খাবার খাওয়াতে পারে নাই।

Thursday, September 30, 2010

বাসস্ট্যান্ড

প্রতিদিন বাস স্ট্যান্ড এ দাঁড়ায় ওরা। একজন টিকেট কাটে শাহবাগের, আর অপরজন বারিধারার। প্রায় একই সময় আসে...কখনো কখনো মেয়েটা লেট করে ঠিকই, কিন্তু শেষ মুহূ্র্তে দেখা হয়ে যায় ওদের।

এতদিনে মুখটা চেনা হয়ে গেছে ওদের । দেখা হলেই একটু হাসে ওরা। ছেলেটা একটু  লাজুক... আর মুখচোরা। পাশাপাশি স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকলেও কথা বলার সাহস হয়নি  কখনও।বইটা হাতে দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ। ঝালমুড়িওয়ালা হাসে আর কান্ডকারখানা দেখে।

বৃষ্টির দিনের কথা খুব মনে পড়ে ছেলেটার। সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল...বাতাসও বইছিল খুব। ঝোড়ো হাওয়ায় মেয়েটার ছাতি উলটে গিয়েছিলো ;শত চেষ্টায়ও ঠিক করতে পারছিলো না। ছেলেটা ছাতাটা ঠিক করে দিলো " এই নিন, বাতাসের বিপরীতে ধরবেন, ছাতা উল্টাবে না"। মিষ্টি হাসলো মেয়েটা,  " ধন্যবাদ "।

এভাবে দিন যায়...মাস যায়। পহেলা বৈশাখের দিনে ওরা সেজেছিলো আপন মনের রঙ এ । বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে মেয়েটি ইশারা করে।
" শুনুন ? "
" হ্যা বলুন? "
" শুভ নববর্ষ "
 "আপনাকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা।"

 আর কথা হয়নি। বাস নিয়ে যায় মেয়েটি্কে ... ছেলেটি চেয়ে থাকে অপলক ।

 ওই দি্নটির কথা মেয়েটার মনে পড়ে এখনো । ছে্লেটা রাস্তা পার হবার সময় মোবাইলটা পড়ে যাবার পর যখন ওটা তুলতে গেলো , তখন ওর কেন যে গাড়িটার দিকে চোখ গেলো না, তা বিধাতাই জানেন। মেয়েটা এগিয়ে গিয়েছিলো। চেষ্টা করেছিলো ছেলেটাকে বাচাবার। কিন্তু সব কি এক জীবনে পাওয়া সম্ভব?

 আজও মেয়েটি বাসে উঠে । যাবার আগে খেয়াল করে ওই বাস স্ট্যান্ডের দিকে। যদি কেউ আসে ওখানে... যদি কেউ তাকায় তার দিকে...।

Wednesday, August 25, 2010

সল্ট, ট্রেজার আইল্যান্ড ও অন্যান্য।

সল্ট ছবিটা দেখলাম। এঞ্জেলিনা জোলির সর্বশেষ ছবি।এজেন্ট এভ্‌লিন সল্ট রাশিয়ার একটি গুপ্ত সংস্থায় প্রশিক্ষণ পায়। একটি মেয়ের বদলে ছদ্মবেশে সে আমেরিকায় প্রবেশ করে। বড় হবার পর তার পুর্ব পরিচয় ভুলে গিয়ে একজন দেশপ্রেমিক সি.আই.এ এজেন্ট এ পরিণত হয় সে। ঘটনাক্রমে তার বিবাহ বার্ষিকীতে তার রাশিয়ান গুপ্ত সংস্থার প্রশিক্ষক এসে সি.আই.এর সদর দপ্তরে এসে জানান যে সল্ট আমেরিকার ভাইস-প্রেসিডেন্ট এর ফিউনারেলে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট কে হত্যা করবে।মুহূর্তেই সল্ট চক্রান্ত বুঝতে পারে এবং সেখান থেকে পালনোর চেষ্টা করে।শুরু হয় সল্টের ফেরারি জীবন।

কাহিনী বাণিজ্যিক হিসেবে অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। বিশেষ করে জোলির ‍অ্যাকশন দৃশ্যগুলো খুবই ভালো হয়েছে। ডিরেক্টর ফিলিপ নয়সে ভালো কাহিনী বিন্যাসের মাধ্যমে ছবিটা্কে ভালো স্পাই থৃলারে পরি্ণত করছেন। আর জোলির অভিনয় সম্পর্কে বলাই বাহুল্য; বরাবরের মতোই ভালো অভিনয় করলো। মোট কথা, ছবিটা সব বন্ধুদের নিয়ে দেখার মতোযদি কিছু কল্পনাতীত অ্যাকশন দেখে হাসি পেতে পারে:)...

ফেসবুকের কথা বলিনতুন একটা গেম খেলা শুরু করলাম, ট্রেজার আইল্যান্ড নাম। গেমটার মধ্যে খেলোয়াড় একজন গুপ্তধন শিকারী, গুপ্তধন খঁজাই তার পেশা। গেমের মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে আপনাকে গুপ্তধন উদ্ধার করতে হবে, এতে থাকবে অনেক পুরষ্কার। চাষ-বাস করতে পারবেন, পোষা প্রাণী থাকবে, আর থাকবে প্রাচীন নিদর্শনের বিশাল সংগ্রহ (যার অধিকাংশই আপনার অভিযান থেকে পাবেন)।

খেলাটা ভালোই, কিন্তু আর সব ভালো অনলাইন গেমগুলোর মতোন এটারো অনলাইনে অনেক প্র্য়োজনীয় জিনিষ কিনতে হয়। এটা বাদে বাকি সবই ভালো। অনেক মজা গেমটা খেলেট্রাই করে দেখতে পারেন।

ঘুম আসছে।ভেবেছিলাম আরো কিছু লিখবো কিন্তু আর পারলাম না। আজকের মতো টা টা  


Sunday, August 22, 2010

আজ আমার মন ভালো নেই।





মনটা অনেক খারাপ।

অনেক বেশি খারাপ। কিছুই ভালো লাগছেনা। আমার নিয়তি আমি জানি, কিন্তু সেই নিয়তিকে আমি বদলাতে পারছি না।হাজারবার...বারেবার আমার সেই একই ভুল হচ্ছে। জীবনটা খুব একঘেয়ে লাগে এখন।

ক্লাস নেই...পরীক্ষা শেষ হলো মাত্র। মজার বিষয়, পরীক্ষা দিয়েই আমার আর কিছু করবার থাকে না...বাসায় খুব একা লাগে। ঘুম কে মনে হয় একটা ওষূধের মতো...খারাপ লাগলেই ঘুমিয়ে পরি। আবার, কখন শত চেষ্টায়ও ঘুম আসছে না।

আগুনের গানটা শুনছি। ওই যে...'আমার স্বপ্নগুলো কেনো এমন স্বপ্ন হয়...'। গানটা মনে হয় এই সময় শুনবো বলেই পিসি'তে রাখা।

বাইরে নৈশপ্রহরীর বাঁশির আওয়াজ। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে অদের মতো সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। মাঝরাতে ঘুরতে তো ভালই লাগার কথা...তাই না?

কিছুক্ষন আগে ভাবছিলাম 'আচ্ছা, কাজ না থাকলে এতো একঘেয়েমি লাগে কেন?' মনে হয় যেন হাজার বছর ধরে আলস্যের বীজ বপন করে যাচ্ছি শরীরের প্রতিটি কোনায়...হয়তো ভালোবেসে,হয়তো ঘৃণা নিয়ে...অলস শরীর খেয়ে ফেলছে মাথার রসালো মগজ...'

স্যরি। একা থাকতে থাকতে মাথা একটু ওলট-পালট হয়ে গেছে। কি আর করবো...দিন দিন আমি শয়তানের কারখানার শ্রমিক হয়ে যাচ্ছি...

মিনারের 'ক্রোধ' শুনছি। গানটা মনোযগ দিয়ে শুনতে হবে। আজকের মতো এখানেই ইতি।

আবোল-তাবোল লেখা না পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ !


আলবিদা ! 


Friday, August 20, 2010

-ঃ ঈদ ভাবনা ঃ-

অনেক দিন পর আজ  লিখতে বসে খুব ভালো লাগছে। সারদিন এতো কাজ আর হাজারো আলস্যের ভীড়ে লিখতে আর বসা হয়না । আজ লিখছি , লিখব।

রমজান  শুরু হয়ে গিয়েছে। আজ  নয় রোজা শেষ...আর হয়তো  ১৮ কিনবা ১৯ রোজা পরেই ঈদ...

ঈদ করতে, সত্যি কথা বলতে কি, আর ভালো লাগে না। কি করবো, না করবো করতে করতে যখন ঈদ আসে, তখন আর কিছুই করা হয় না। সারদিন  নতুন জামা কাপড় পড়ে বসে থাকি, বন্ধুরা হয়তো দূরে কোথাও তাদের বাড়িতে বসে আছে, কিনবা তাদের প্রিয়জন নিয়ে ব্যস্ত।

একটা সময় অনেক মজা ছিলো। আমরা তখন থাকি আমার মামার বাসায়। একতলা বড় একটা বাড়ি, দেখলে বাংলো বাড়িগুলোর কথা মনে পড়তো। বাড়িটার চারপাশে আম,জাম,কাঁঠাল আরো হাজারো ফলের গাছ, সামনে একরত্তি উঠোন, সেখানে আমরা খেলতাম। আশপাশে বাড়ি বলতে পাশে একটা ৬তলা বাড়ি। ঈদের দিন আমার কাজ ছিলো ওই বাড়িতে যাওয়া, আন্টিকে সালাম করা, মিষ্টি পায়েস খাওয়া, আর খানা শেষে, যেনো খুব লজ্জিত, এমন একটা ভঙ্গিমায় ঈদের সালামি নেওয়া। বিধবা আন্টি আমাকে খুবি আদর করতেন। এখন তিনি কি করেন জানি না। কিন্তু এখনো তাকে আমি খুব মিস্‌ করি।

আরো যেতাম রেণু আন্টির বাসায়, এখনো যাই। গেলেই আমি জানি যে আমাকে তিনি ম্যাকারনি খেতে দিবেন...আর পেঁপের জর্দা। জানতাম বলেই আমি বাসায় কখনো এগুলো রান্না করতে দিতাম না, শুধু শুধু নষ্ট হবে...:) ।খাবার শেষ হলেই সালামি নিয়ে দে ছুট!

আরো কয়েক বাসায় গিয়ে একই রকম রান্না কিন্তু ভিন্ন স্বাদের আমেজ নিয়ে যখন বাসায় ফিরতাম, তখন আর মায়ের হাতের রান্না খাবার জন্য পেটে একফোঁটা জায়গা নেই। কি আর করা, ঘুমাতাম। ঘুম থেকে উঠলেই দেখতাম, মা-বাবা হয়তো রিংকু ভাইয়াদের বাসায় গেছেন, কিংবা অন্য কোন মেহ্মান আমাদের বাসায় এসেছেন। এই ফাঁকে দু-এক্টা ফোন, আর নতুন কেনা তিন গোয়েন্দা বইটা পড়তে পড়তে গান শুনা। কখন যে দশটা বেজে যেত, খেয়াল হতো না।

পরদিন আমরা যেতাম আমাদের চাচার বাসায়। ওনাদে বাসায় ঈদের পরদিন একটা দাওয়াত থাকতোই। প্রথম প্রথম মোহাম্মদপুরের বাসায়, কিংবা শেষের দিকে উত্তরায় যেতাম। ওখানে আমার ভালো লাগতো না, এতো মেহমান ভর্তি বাসা আমার কখনি ভালো লাগেনা।

আমি ঈদে কখনো আমার গ্রামের বাড়ি যাইনি। ঈদের পরদিন গিয়েছি, কিন্ত ঈদের দিন আমার যাওয়া হয় নাই। জানি, গ্রামে করার মজা রয়েছে, বিশষত কোরবাণীর ঈদে, কিন্তু এই ১৫ কোটি মানুষের দেশে ঈদে বাড়ি যাওয়াটা রীতিমতো নরকযুদ্ধ। সৌভাগ্য হয়েছে কেবল গতবার নানাবাড়ি যাবার, তাও ১৪ ঘন্টা ধরে গাড়িতে বসে থাকার পর !

এখন কেবল বাসায় বসে থাকা, গান শোনা, নতুন কোন সিনেমা আসলে দেখা, আর সবছেয়ে বড় কাজ...'ঘুম' কারো বাসায় আর যেতে ভালো লাগে না। ঈদের সেমাই ভেজাল, তাই আর খেয়ে স্বাদ পাই না। সবাই বের হলেও একা বাসায় বসে থাকি। একা লাগে...বড্ড একা হয়ে যাচ্ছি।


সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।


Sunday, June 6, 2010

ফেসবুক চালু প্রসংগ ও একটি নিখোঁজ সংবাদ।

বেশি কিছু লিখতে পারছিনা আজকে। দুটো খবর দেব।আজকে সকালবেলা পত্রিকায় দেখি ফেসবুক খোলা হয়েছে।আমার কাছে কখনই বন্ধ ছিলোনা (প্রক্সি সার্ভার গুলোর বদৌলতে) কিন্তু সার্বজনীনভাবে ,কিংবা বলা যায় আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেবার জন্য বিটিআরসিকে একটু সাধুবাদ জানাই (কারণ না খুলে দিলে হয়তো slow চালাতাম যেটা দিয়ে চালাতে বিরক্ত লাগতো)।
সবাইকে বলি,স্বাধীনতার মানে তো নিজেদের দুর্বলতাকে প্রকাশ করা নয় ( যেটা আমাদের দেশের সকলেই করেন )। স্বাধীনতার মানে সবাইকে স্বাধীন করা, আমাদের মনের অন্ধকারের মাঝে পবিত্রতার ছোয়া বুলিয়ে দেয়া, যাতে আমাদের মাঝে আলো আসে, জ্ঞানের আলো। আর কেউ যদি স্বাধীনতার অপব্যবহার করে, তবে তাকে ঠেকাও। কারণ তার জন্য তো অন্য সবাই পরাধীন হয়ে যাচ্ছে, তাইনা?

শেষের খবরটা একটু কষ্টের। কিছুক্ষন আগে গিয়েছিলাম মুদি দোকানে। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই শুনলাম একটা হারিয়ে যাবার খবর। একটা তাজা প্রাণ কিছুক্ষন আগে হারিয়ে গেছে। সে হারিয়ে গেছে, সকলকে ছেড়ে চলে গেছে। কেনো গেছে জানতে চান ? সে গেছে বিশ্বকাপে অংশ নেয়া তার প্রিয় দলের জন্য। আর তাকে কি দোষ দেয়া যায়, বলো ? ওতো কেবল একটা পতাকা টানাতে গিয়েছিলো...ওর হাত যে বৈদ্যুতিক তারের সাথে লেগে যাবে তা কি কেউ ভেবেছিলো ? সে খালি চেয়েছিলো তার দল যেন জেতে, সে তো চেয়েছিলো তার ছোট মেয়েটার সাথে খেলা দেখবে, প্রিয় দলের বিজয়ে আনন্দে নিশান ওড়াবে...। আর হলো কই তার খেলা দেখা?

শেষ করছি। সবাই ভালো থাকবেন।

Friday, June 4, 2010

নিমতলী ট্র্যাজেডি...কেন এমন হয়?

কালকে রাতে আমি সন্ধ্যায় বাসায় আসি; একটু ঢাকা নিউমার্কেট গিয়েছিলাম। গোসল করে একটু টিভির চ্যানেলগুলো ঘুরাচ্ছিলাম। এটিএন নিউজ এ নিউজ বারে চোখ পড়তেই দেখি, কায়েতটুলী এলাকায় ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণের কারণে আগুন লেগেছে।(picture courtesy: Prothom alo)

আমার খালার বাসা কায়েতটুলীতে। তাড়াতাড়ি বাবাকে বললাম , আম্মা যেন একটা ফোন করে খালাকে। ওদিকে আমার অন্য আরেক খালা ফোন অরে বললেন, ওই খালার বাসার পাশেই আগুন লেগেছে। একটু আতংকিত হলাম।বার বার চ্যানেলগুলো বদলাতে লাগলাম আর খবর দেখতে লাগলাম।

যা দেখলাম, তা আসলেই ভয়াবহ। ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লাগে একটা বাড়ির নিচে গোডাউনে।ওখানে রাখা দাহ্য পদার্থ আগুন আরো বাড়িয়ে দেয়।ওই বাসায়, কিংবা বাসার আশেপাশে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিলো।সে বাড়ির কি অবস্থা হয়েছে তা কি ভাবা যায়?

ওই বাড়ির ২ টি রুমেই মারা যায় ৪৭ জনের লাশ। আগুনের লেলিহান শিখা আর দম বন্ধ করা ধোয়াঁ এতগুলো প্রাণ কেড়ে নিলো।ফায়ার সার্ভিস দ্রুত আসলেও পানির সঙ্কট, ছোট রাস্তা, আর উৎসুক জনতার কারণে যা করণীয় তা করতে পারেনি, লাশ উদ্ধার আর ঘটনার শেষে আগুন নেভানো ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারেনি।

হাস্পাতালে দেখা গেলো এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে কেবল লাশ আর লাশ...অগ্নিদগ্ধ মানুষের লাশের সারি। নিহতদের স্বজনরা শুধু নয় হাসপাতালে থাকা যে কেউ মানুষ-ই এই দৃশ্য দেখে চোখের জল সামলাতে পারেনি।এমনকি হাসপাতালের একজন সেবিকা এই মৃতদের কাতারে শামিল হয়েছিলেন।

রাত যত বাড়ছিল, লাশের সংখ্যা আরো বাড়তে লাগলো।মানুষের আহাজারি শুনে মন যে কতটা খারাপ হচ্ছিল, তা বললে বুঝাতে পারবোনা।খালারা নিরাপদে ছিলেন,তাদের কোন problem হয়নি, কিন্তু এতোগুলো মানুষের হাহাকার শুনে কি যে বিষাদময় লাগছিলো, তা বলে বোঝানো যাবে না।

আজ সকালে আবার দেখলাম ওই ভবনগুলোর অবস্থা...পুরো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গোটা এলাকা। কাল রাতে যেন কেয়ামত হয়ে গিয়েছে এখানে। বিয়ে বাড়িতে খাবার আছে, কিন্তু সে খাবার যাদের জন্য রান্না করা হয়েছিলো, তারা তো আর নেই।

তারা আর আসবেনা। আমাদের কে অশ্রুসজল করে তারা ছলে গেছেন দূরে, অনেক দূরে। তাদের জন্য আমাদের সমবেদনা থাকল। আসুন, আমরা এই জাতীয় শোককে শক্তিতে পরিণত করি।

Tuesday, June 1, 2010

আসছে বিশ্বকাপ, আপনি সমর্থন করছেন কাকে?

ইদানীং রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবার সময় প্রায়ই দেখি বাসার ছাদে, দোকানপাটের জানালার কাঁচের ভেতরে কিংবা গাড়ির ফ্ল্যাগস্ট্যান্ডে পতাকা ঝুলছে।:)..না, সুবার দেশপ্রেম হঠাৎ করে বেড়ে যায়নি, কারণ এগুলো আমাদের দেশের পতাকা নয়।বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া দেশের পতাকা।


2010 FIFA World Cupবিশ্বকাপ ফুটবল ২০১০ শুরু হতে যাচ্ছে আর কয়েকদিন পর।অলিম্পিকের পর বোধহয় এর চেয়ে বড় কোন অনুষ্ঠান আছে বলে আমার জানা নেই। এ যেন শুধু ফুটবল নিয়ে যুদ্ধ ! বাছাই পর্বের তুমুল প্রতিদ্বন্দীতার পর ৩২ টি দেশ সুযোগ পায় যুদ্ধের ময়দানে হাজির হবার। তারপর মাসব্যাপী টানটান উত্তেজনায় ভরপুর প্রতিযোগীতা শেষে শেষ হাসি হাসে চ্যাম্পিয়ন দেশের কোটি কোটি মানুষ।




এই বিশ্বকাপ নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের উত্তেজনার মাত্রাটা ৩২টা দেশের মানুষের তুলনায় কোন অংশেই কম নয়।আমরা ফিফা ওয়ার্ল্ড রেটিং-এ নিচের দিকে অবস্থান করছি। সাম্প্রতিক সময়েও আমাদের পারফর্মেন্স আশাব্যাঞ্জক নয়।কিন্তু বিশ্বকাপে আমাদের কোন অংশগ্রহণ না থাকলেও আমরা ওই বড় দলগুলোকে সাপর্ট করছি,মনে প্রাণে। পাশের বাড়ির ইব্রাহিম কাকা থেকে শুরু করে পাড়ার মুদি দোকানদার কামাল ভাই পর্যন্ত কোননা কোন টীম সমর্থন করছে। পতাকা বিক্রেতারা রাত-দিন পতাকা বিক্রি করছে দেদারছে; ছোট ছোট ছেলেরা জার্সি আর ফুটবলের জন্য বায়না ধরছে নিয়মিত।


এই বিশ্বকাপের মত বড় একটা টুর্নামেন্ট আমাদের মাঝে যে প্রাণের স্পন্দন এনে দেয় তা যেন আমাদের সবাইকে উজ্জীবিত করে। আমরাও যেন স্বপ্ন দেখি, একদিন আমাদের দেশ বিশ্বকাপ ফুটবলে না হোক, ক্রিকেটে যেন আমরা গর্জে উঠতে পারি। স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই, তাই না?

Sunday, May 23, 2010

বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিঃনতুন প্রজন্মের ভাবনা

বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি, বলা যায় দীর্ঘ পথ পরিক্রমা পাড়ি দিয়ে এমন এক সময়ে এসে উপস্থিত হয়েছে, যেখানে এসে এ বিষয়ে যেমন গর্ব করা যায়, তেমনি বর্তমান প্রেক্ষাপটে এর বিভিন্ন দিকের যুগোপযোগী পরিবর্তন নিয়ে চিন্তা করাটাও আবশ্যক।ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত আমাদের দেশের ছাত্র রাজনীতি যে কতটা ভূমিকা রেখেছে, তা বলা বাহুল্য। আমাদের মত নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এই বিষয়ে গর্ববোধ করতেই পারে


কিন্তু এখনকার দিনে একটি প্রশ্ন আমাদের সকলের মনে আসাটা আবশ্যক হয়ে দাড়িয়েছে, ' বর্তমান যুগে আমাদের ছাত্ররাজনীতি কতটা আধুনিক?"
। আমরা সকলেই জানি, এই মুহুর্তে ছাত্ররাজনীতি অনেকটা 'ছাত্রসন্ত্রাস' -এ পরিণত হয়েছে, যেখান থেকে আমাদের অবশ্যই উত্তরণ ঘটাতে হবে। কালের আবর্তনে ছাত্ররাজনীতি মূলত রাজনৈতিক দলের বিশৃংখলা সৃষ্টির হাতিয়ার হয়ে দাড়িয়েছে, যা কখনই একটি সুষ্ঠ সুশৃংখল শিক্ষাঙন গড়ে তুলতে পারে না

কাজেই, প্রথমত, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে এই বোধদয় আনতে হবে যে তাদের সৃষ্ট এই ধারা না ভাঙলে তাদের দলগুলো ভবিষ্যতে কোন নেতৃত্ব আনতে পারবে না, যারা দলের প্রয়োজনে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারবে
।আর নেতৃত্ব না দিতে পারলে তাদেরই ক্ষতি, উপরন্তু দেশ আরেক সঙ্কটের মধ্যে পড়বে

দ্বিতীয়ত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে রাজনৈতিক জ্ঞান-ভিত্তিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে
। উচ্চ-মাধ্যমিক স্তর থেকেই এই বিষয়ে কেবল পাঠ্যপুস্তক নয়,ছাত্রদের নিয়মিত দায়িত্বশীল কার্যাবলী পরিচালনার দায়িত্বভার দিতে হবে

তৃতীয়ত, আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে রাজনীতি সম্পর্কিত সকল প্রকার ভুল ধারণার অবসান ঘটাতে হবে
। আমরা জানতে চাই দেশের গৌরবময় রাজনীতির কথা, কাদা-ছোড়াছুড়ি নয়

চতুর্থত, আমাদের দেশে হাজারো মানুষের নেতৃত্ব দেবার গুণ আছে
। দুঃখের বিষয়, তারা সঠিক দিক নির্দেশনা পান না। যার দরুণ সঠিক আদর্শে দীক্ষিত অবিসংবাদিত নেতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দল গুলো এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়া উচিত

এই বিষয়ে আরো অনেক বক্তব্য দেয়া যেতে পারে
। সময় সুযোগ অনুযায়ী আমি সেগুলো প্রকাশ করার আন্তরিক চেষ্টা করব।সকলকে ধন্যবাদ



ঘুমনামা

মাঝে মাঝে মনে হয় আমি একা বসে আছি। একটা খালি মাঠের এক কোনে, বিলের পাশের নিচু ঢালে। শুয়েও পড়তে পারি, যদি ইচ্ছে হয়। তারপর কি করব জানি না। আমি অ...