Monday, October 18, 2010

চিরচেনা...চিরঅচেনাঃ পর্ব-২

                                              ||--------৩-------||

আজকে সকাল বেলাতেই এত রোদ উঠে গেলো ! সারাদিনে তাহলে কি হবে? এইসব ভাবতে ভাবতে যখন ঘড়িটার দিকে চোখ গেলো তখন অন্তু তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো। দশটা বাজে ! বড্ড দেরী হয়ে গেল... আজকে সে ক্লাসে যেতে পারলো না । মম তো একবার হলেও উঠিয়ে দিয়ে যায়...

কিন্তু মম থাকলে তো বাপির সাথে কথা কাটাকাটি হতো।
মম কোথায়? কাল বাড়ি আসে নি?

"আজম চাচা ! আজম চাচা !" ডাকতে ডাকতে অন্তু নিচে নেমে আসলো। বাপির গাড়ি নেই,তারমানে বাপি অফিসে চলে গেছে। কিন্তু মমের গাড়ি তো নেই। ওয়েট, শফিক ভাই তো ঠিকই আছে...তাহলে মম গাড়িসহ আবার কোথায় গেলো?

আজম গাছে পানি দিচ্ছিল।ডাক শুনে কলটা বন্ধ করে দিয়ে ভিতরে গেলো। হাতটা মুছতে মুছতে বললো, "উঠেছ তাহলে?আমিতো ভাবলাম একবার গিয়ে জাগিয়ে আসবো নাকি..."

"মম কোথায়?"

কি যেন চিন্তা করলো আজম।এক মুহূর্ত ভেবে বললো," তোমার মা অফিসে।"
"কিন্তু শফিক ভাই তো বাসায়।"
"তোমার মা একাই গাড়ি নিয়ে গেছেন।"বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো আজম।
অন্তুর ভয়ানক রাগ হলো। "আজম চাচা, আমার দিকে তাকাও।"আজম তার দিকে তাকাল।
"মম কোথায় ? সত্যি করে বলবে।"
"আমি জানি না অন্তু। আমাকে জিজ্ঞেস কোর না, আমি জানি না।"
অন্তু আর কিছু বলল না। নিজের ঘর চলে গেলো। বাপিকে ফোন করতে হবে, বাপিকেই জিজ্ঞেস করতে হবে।

মোবাইলে বাপির নাম্বারটা রাখে না অন্তু। কিন্তু এই নাম্বারটা অন্তুর সবসময় মনে থাকে। কেন সেভ করে না সেটা সে নিজেও জানে না।কিন্তু সেভ করে না।

"হ্যালো, আশরাফ স্পিকিং..."
"বাপি, মম কোথায় গেছে?"
"অন্তু? নাস্তা খেয়েছ?"
"মম কোথায় বাপি?"

আশরাফ কিছু বললেন না। আসলে কি বলা দরকার সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না।বলে দেয়াটাই ভালো। নিজের আত্মপক্ষ সমর্থন করাটা উচিত। ছেলেটার বোঝা উচিত যে তার কোন দোষ নেই।

"বাপি, কথা বলছো না কেন? মম কোথায়?"
"তোমার মম লন্ডনে তোমার নানুর কাছে চলে গেছে।"
"ও।"
"আজ সকালে চলে গেছে।"
"ও। আমি রাখি।"
"অন্তু তোমার জানা দরকার সন্ধ্যা কেন চলে গেল..."
"বাপি প্লিজ। আমি রাখলাম।"

অন্তু কিছু অনুভব করে পারলো না তেমন। একটা ভোঁতা অনুভূতি...তেমন কোন কিছুর কথা ভাবতে ভালোও লাগছে না। মোবাইলটা বাজছে...সম্ভবত বাপি আবার ফোন দিয়েছে। অন্তু ফোনটা বন্ধ করে রাখলো।তার এই বাড়িটা অসহ্য লাগছে। বিছানা থেকে উঠলো অন্তু। তার ট্রাভেলার্স ব্যাগটা বের করলো। দু-চারটা গেঞ্জি,টি-শার্ট, জিন্সের প্যান্ট আর খাতা-কলম নিলো। টেবিল থেকে প্রিয় এস.এল.আর টা বের করলো। স্নিকার্সটা পড়লো। মানিব্যাগে যা আছে, তা দিয়ে এক মাসের খানা- খরচ হয়ে যাবে...সব টিফিনের টাকা।ও, ভালো কথা ল্যাপটপ টা খুললো অন্তু। মাকে একটা মেইল দিবে সে। দুটো লাইন লেখা মাত্র।তারপর ? হাওয়া হয়ে যাবে সে।একেবারে হাওয়া।



(এই লেখার সর্বস্বত্ব লেখকের ।এই লেখা লেখকের অনুমতি ব্যাতীত প্রকাশ,মুদ্রণ,অনুলিখন কিংবা কোন রচনায় প্রকাশ করিলে লেখক আইনানুগ ব্যাবস্থা নিতে বাধিত হইবেন।লেখকের মৃত্যুর পর লেখাগুলির সর্বস্বত্ব লেখকের পরিবারের।)

No comments:

ঘুমনামা

মাঝে মাঝে মনে হয় আমি একা বসে আছি। একটা খালি মাঠের এক কোনে, বিলের পাশের নিচু ঢালে। শুয়েও পড়তে পারি, যদি ইচ্ছে হয়। তারপর কি করব জানি না। আমি অ...