Sunday, October 17, 2010

চিরচেনা... চিরঅচেনাঃ পর্ব-১

                                               ||---------১---------||



অন্তুর মাঝে মঝে মনে হয় সকাল বেলাটা আসলে সকাল না হলেই ভালো হতো। কারণ এই একটা সময়েই বাপি-মম একজন আরেকজনের মুখ দেখেন। ঘুমের বারোটা বাজে, কিছু না খেয়েই কলেজে যেতে হয় (সামনে পড়লে ঝগড়াটা ওকে নিয়েই শুরু হয় বলে সে তাদের সামনে যাওয়াটাই আজকাল বাদ দিয়েছে) ।একটা দুটো ক্লাস করে বের হয়ে যায়,চুপচাপ কোন একটা পার্কে গিয়ে বসে থাকে।

ওইদিন রাশেদ স্যার ওকে দেখেছিলেন পার্কের ভিতর। কিছু বলেননি সেদিন। পরদিন ক্লাস শেষে জিজ্ঞেস করেছিলেন ওখানে কি করছিলো সে। "আরো দুটো ক্লাস ছিলো না তোমার?"

"জ্বি স্যার।"
"করো নি কেন?"
 কিছু বললো না অন্তু।

চশমাটা খুলে রুমাল দিয়ে মুছতে লাগলেন স্যার।"শোন, এই বয়েসটাতে একটু মন খারাপ হবে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু ক্লাস করলে বন্ধুরাও তো তোমার সাথে থাকবে, ওদের সাথে তোমার কথা শেয়ার করতে পারো, তাই না?"
কিছু বললো না অন্তু। এই কলেজে ভর্তি হবার পর তার সাথে কারোই বন্ধুত্ব হয় নি। না হওয়াটাই স্বাভাবিক, সে আসলে নিজেই একটু একা থাকতে চায়।
অন্তুর কাঁধে হাত রখলেন তিনি।"আর এইরকম করো না। তোমার গার্জেনকে একটা ফোন দিতে বলবে।"
"আচ্ছা।"। কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় ক্লাস শেষ হবার পর আবার বের হয়ে গেল অন্তু।

ক্লাস করতে যে ভালো লাগে না তা কিন্তু নয়; ভালোই লাগে। কিন্তু তার সে আসলে এত মানুষের মাঝে ক্লাস করতে গিয়ে কেমন যেন একটা হিংসা বোধ করে...একটা ক্ষোভ কাজ করে অন্তুর মনে। ভাবে, এত মানুষের মতো আমি হলাম না কেন? অপুর ফোন্টা কাজ করছে না, কান্তার গানের মাস্টারের সাথে ওর মন দেয়া-নেয়া চলছে, রাসেলের গিটারটার তার খুজেঁ না পাওয়া কিংবা আদনান কোন কারণে একা একা বসে কাদছে...এসবই তাকে দারুণ একটা ক্ষোভের উনুনে চড়িয়ে দেয়। সে জানে, তার এইসব সমস্যা হয় না। ফোন কাজ না করলে বাপি ফোন কিনে দেবে, মম একটা দামী গিটার কিনে দিবে না চাইতেই...আর সবচেয়ে বড় কষ্টটা হল-সে সহজে কাদঁতে পারে না।

প্রতিদিনের মতো আজও বাংলা ক্লাস শেষ হবার পর অন্তু বেরিয়ে যাচ্ছিল। আজ অবশ্য ছুটি হয়ে যেত...ফার্স্ট ইয়ারের নবীণবরণ হবে,তাই সবার আজ ছুটি । আজ কোথায় যাবে ভাবতে লাগলো সে।একবার ভাবলো একটু পুরোন ঢাকায় যাবে, তার খালার বাড়িতে বহুদিন যাওয়া হয় না। আবার ভাবলো গেমস্‌ জোনে চলে গেলেও হয়...নতুন গেমস্‌ এসেছে...।এইসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ...

"স্যরি...আমি দেখিনি..."
"না না, ঠিক আছে..."

ঠিক কি আছে? মেয়েটার শাড়িটা নোংরা হয়ে গেছে...মেয়েটাও মনে হচ্ছে বেশ ব্যাথা পেয়েছে।ধরে-টরে উঠালো অন্তু। মেয়েটা শাড়িটা হাল্কা ঝেড়ে দাড়ালো। অন্তু কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না। চলে যাওয়াটাই ভালো, এই ভেবে গেটের দিকে রওনা দিলো।

"এই যে, শুনুন?"
 আবার কি হলো? ধুৎ, এসব ভালো লাগে না তার।
"আমাকে বলতে পারবেন  সেন্টার হলরুমটা কোন দিকে?
"বায়ে গিয়ে সোজা প্যাসেজ ধরে গেলেই হলরুমটা দেখতে পাবেন।"
"আচ্ছা, ধন্যবাদ।"

মেয়েটা হলরুম খুঁজলো কেন? ও...ফার্স্ট  ইয়ার হবে। এই জন্যই তো শাড়ি পরেছে। মম আগে যখন শাড়ি পড়ে অন্তুকে নিয়ে বাইরে যেতো, তখন তার খুব ভালো লাগতো। এখন কেন যে শাড়ি পড়ে না, কে জানে...

                                      ||----------২-----------||

রাতে শোবার আগে অন্তু একবার করে একটু তার কবিতার বইগুলো একটু পড়ে। তার কবিতা পড়তে খুব ভালো লাগে। আবৃত্তি ক্লাস করতে গিয়েছিলো কয়েকদিন, কিন্তু পরে আর যাওয়া হয়নি। বাপি অবশ্য এতে খুশিই হয়েছিলো।"মানুষ কতো রকমের কাজ করে, আর তুমি কবিতা আবৃত্তি চর্চা করছো? ভালোই হলো, এখন থেকে তুমি পারলে গিটারটা শেখার চেষ্টা কর, ওইদিন রহমানের ছেলেটা গিটার বাজিয়ে শোনালো, কি সুন্দর melody..."

আজ আর কবিতা পড়তে ভালো লাগলো না। একটু শরীরটাও খারাপ, সর্দিজ্বর-টর হবে হয়তোবা। লাইট নিভিয়ে চাদরটা মুড়ি দিইয়ে শুয়ে পড়লো অন্তু।

অবশ্য ভালো না লাগার একটা অন্য কারণও আছে। অন্তুর নিজেরও একটু বিরক্ত লাগছে। অযথা একটা মেয়েকে মনে রাখার কোন মানে আছে? আচ্ছা, স্যরি নাহয় আরেকদিন বললেই তো হবে ,তাই না? সেদিন আসার পথে শুনলো রাসেল কোন মেয়েকে আন্টি বলার কারণে ইয়া বড় এক চড় খেয়েছে। সেও যদি খায়?

হঠাৎ গাড়ির শব্দ। বারোটা বাজে, তারমানে বাপি এসেছে। মা আজ একটু আগেই এসে পড়েছিলো...এসে হড়হড় করে বমি করে ঘুমিয়ে পড়েছে।এরা যে কি কারণে ড্রিংকস্‌ করে...!
এসিটা অফ করে অন্তু ঘুমিয়ে গেল।

(চলবে)

No comments:

ঘুমনামা

মাঝে মাঝে মনে হয় আমি একা বসে আছি। একটা খালি মাঠের এক কোনে, বিলের পাশের নিচু ঢালে। শুয়েও পড়তে পারি, যদি ইচ্ছে হয়। তারপর কি করব জানি না। আমি অ...