Wednesday, November 30, 2011

গুগলের ভূগোল-৩ || প্যানোরামিও


 গুগলের অনেক রকম ওয়েব বেজড্‌ কাজ আছে যেগুলো দেখে অবাক হতে হয়। এই যেমন গুগল আর্থ- অসাধারণ একটা ব্যাপার, ঘরে বসেই আপনি আপনার অবস্থান সম্পর্কে জেনে যেতে পারেন এক নিমিষেই।স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিগুলোর সুপার ইম্পসিশনের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোন স্থানের ত্রিমাত্রিক ছবি দেখা যায় যেকোন সময়। গুগল আর্থ প্রো ব্যবহার করেছেন কেউ? করলেই বুঝতে পারবেন।

আজকে গুগল আর্থ নিয়ে কিছু লিখতে বসি নাই, আমার ধারণা অনেকেই গুগল আর্থ নিয়ে মোটামুটি ধারণা রাখে। আজকে আমি এইরকম আরকটা জিনিষ নিয়ে কথা বলব।তার আগে কিছু বিষয় নিয়ে ধারণা দেয়াটা জরুরী।

কোন একটা জায়গার ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ডেটা যদি কোন মাধ্যম, যেমন গুগল আর্থের ছবির সাথে যুক্ত করে দেয়া হয়, তাহলে তাকে বলা হয় "Geographical Metadata". এর জন্যই গুগল আর্থ ঘাটলেই আমরা উত্তরার সেক্টর দশের যেমন হদিস পাই, তেমনি নিউ ইয়র্কের কয়টা জায়গায় ম্যাকডোনাল্ডস্‌ এর শাখা আছে তা জানতে পারি। 

প্রশ্ন হচ্ছে, এরকম geographical metadata আর কে ব্যবহার করতে পারে?




গুগল এরই আরেকটা ওয়েবসাইট ই করে। নাম প্যানোরামিও

প্যানোরামিও
Joaquín Cuenca Abela আর Manchón Aguilar নামক দুই উদ্যোক্তা এই সাইট তৈরী করেন। এটা তৈরি হয় ২০০৫ সালে। চার বছরে এই সাইটে প্রায় ৫০ লক্ষ Geo-located ছবি আপলোড হয়। গুগল এর এখানে তাই চোখ পড়তে বেশি দেরি হয় নি। ২০০৭ এ গুগল সাইটটা কিনে নেয়।

প্যানোরামিও একটা ফোটো শেয়ারিং সাইট। এখানে আপনি আপনার ফোটো শেয়ার করতে পারবেন, আপনি তাতে ছবি শেয়ার করতে পারবেন, গুগল আর্থ ব্যবহার করে সেগুলোতে ট্যগ লাগানো যাবে, যাতে জায়গাটি বা ওই বিষয় সম্পর্কে কেউ সার্চ করলে খুঁজে পাওয়া যায়। অনেকটা ফটোব্লগের মত। কিন্তু অনেক নিয়ম-কানুন রয়েছে। যেমন, এখানে কেউ পোজ দিয়ে ছবি তুলতে পারবে না,কোন ডিজিটাল বা এডিটেড ছবি দিতে পারবে না, পশু-পাখি,গাড়ি-প্লেনের ছবির কথা তো বাদই দিলাম।

তাহলে কি দিতে পারব?

স্বাভাবিক, আনএডিটেড ভূপৃষ্ঠ থেকে তোলা ছবি, Landscape যাকে বলা যায়। মানুষ কিংবা পশুপাখি এড়িয়ে না তোলা গেলে আনপোজ অবস্থায় তোলা যাবে।সেগুলো আপলোড করুন, গুগল থেকে সেগুলো বিবেচনা করা হবে। তারপর সেগুলোকে অবিকৃত অবস্থায় গুগল প্যানোরামিওতে উন্মুক্ত করে দেবে। 

মনে হচ্ছে, এভাবে ছবি তোলা সম্ভব নাকি? অবশ্যই সম্ভব। প্যনোরামিওতে অসাধারণ কিছু ছবি তোলা আছে, যেগুলো দেখলে মাথা ঘুরে যায়। প্রকৃতিকে চমৎকারভাবে যে ফুটিয়ে তোলা যায় তা ছবিগুলো দেখলেই অনুধাবন করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়।নিচের ছবিটা দেখুনঃ




কিংবা এইটার কথাই ধরুননাঃ




এইরকম উদাহরণ ভুড়িভুড়ি। ছবি তুলে দেবার পর খালি অনুমোদন পেতেই যা সময় লাগে, এরপর এগুলো নেটে উন্মুক্ত হতে দেরী হয় না।

 গ্রুপ করা যায়, গ্রুপ করে ছবি তুলতে পারেন। এক্ষেত্রে গ্রুপগুলো সাধারণত একটা নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে ছবি তুলতে পারে। যেমন আপনি চাইলে আপনার আশেপাশের কোন একটা টপিকস্‌ নিয়েই শুরু করতে পারেন।তবে এক্ষেত্রে ফ্লিকর অনেক এগিয়ে আছে বলে মনে হয়।

প্যানোরামিওর সবচে' বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর সব ছবি ন্যাচারাল, তোলা ছবি। কোন এডিটেড ছবি নেই, এগুলো বাস্তবে তোলা ছবি।আর এগুলো গুগল আর্থে ট্যাগ করার ব্যবস্থা আছে। কাজেই কেউ ওই স্থানকে গুগলে সার্চ করলে গুগল আর্থে ট্যগ করা অবস্থায় ছবিটা পেয়ে যাবে। 

ফ্লিকারের মত জনপ্রিয় নয় বলেই হয়ত এখান থেকে রাইট ক্লিক করে ছবি ডাউনলোড করা যায়। যদিও ছবিগুলোর কপিরাইট করে ডাউনলোড বন্ধ করে দেয়া যায় বা ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের আন্ডারে শর্তসাপেক্ষে পাবলিশ করা যায়, সে ব্যবস্থাও আছে।

এটাতে রেজিস্ট্রেশন করা কোন ব্যাপার নয়, জিমেইল বা গুগল অ্যাকাউন্ট থাকলেই হল।

মনে হতে পারে, আমাদের দেশে ফ্লিকার ব্যবহারকারী তো কম নয়, কাজেই ছবি আপলোড করার জন্য প্যানোরামিও ব্যবহার করব কেন? আসলে আমার দেশটা যে কত্ত বেশি সুন্দর, সেটা আমরাই কেবল জানি। হাজার হাজার টাকা খরচ করে নিজের দেশটাকে সারা বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল করার যে চেষ্টা চালিয়েছি কয়েকদিন আগে, সেটাই তার প্রমাণ। কাজেই এসব ফটো শেয়ারিং সাইটগুলোতে আমরা আমাদের ছবি আপলোড করে আমাদের দেশকে আরো একটু চেনাতে পারি সবার কাছে, হোক না সেটা ছোটখাট চেষ্টা! ছবি তুলুন, আর জানিয়ে দিন সবাইকে, আমাদের দেশের মতন সুন্দর দেশ আর কোথাও নাই, কোথাও নাই, কোথাও নাই!

আর দুটো খবর দিয়ে যাই শেষ বেলায়...
  1. গুগল যে আজকে থেকে ঘরের ভেতর ঢু মারতে পারে, সেটা জানেন? লিঙ্ক দিলাম।
  2. গুগল আর্থ তৈরি কে করেছে? গুগল? নাহ্‌ 
          তাহলে?
         গুগল আর্থ যুক্তরাষ্ট্রের  সি আই এ  কর্তৃক অনুদিত একটি সফট্‌ওয়্যার/জিওলোকেটিং সাইট।





এই লেখার সর্বস্বত্ব লেখকের ।এই লেখা লেখকের অনুমতি ব্যাতীত প্রকাশ,মুদ্রণ,অনুলিখন কিংবা কোন রচনায় প্রকাশ করিলে লেখক আইনানুগ ব্যাবস্থা নিতে বাধিত হইবেন।লেখকের মৃত্যুর পর লেখাগুলির সর্বস্বত্ব লেখকের পরিবারের।

ঘুমনামা

মাঝে মাঝে মনে হয় আমি একা বসে আছি। একটা খালি মাঠের এক কোনে, বিলের পাশের নিচু ঢালে। শুয়েও পড়তে পারি, যদি ইচ্ছে হয়। তারপর কি করব জানি না। আমি অ...