Sunday, February 21, 2016

কেন আমরা কথা বেশি বলি? ( কিংবা স্বল্পভাষী হবার উপায়)


ভ্যাজর ভ্যাজরের একটা সীমা আছে!

কিংবা বলা চলে আপনি বেশিক্ষণ ভ্যাজর ভ্যাজর করতে পারবেন না।

কিন্তু এর সীমা কোনটা? পাশের বাড়ির বুড়ো বাড়িওয়ালা যখন বকবে, সেটা আপনার কথা বলার সময়ের চাইতে বেশি হতেও পারে, নয় কি? কিংবা আপনিও মাঝে মাঝে একটু বেশিই...



সে কথা থাক বরং। যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই মাধ্যমকে আমরা খুব ছোটবেলা থেকেই আয়ত্তে নিয়ে আসি। কিন্তু বাধ সাধে এর ব্যবহারের সঠিক প্রয়োজনীয়তা না বুঝতে পারা। এর মানে হচ্ছে, আপনি কথা বেশি বলুন, তাতে সমস্যা নেই, কিন্তু আপনি সেটা সঠিক জায়গায় সঠিক ভাবে প্রয়োগ করতে পারছেন কিনা সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞান বলে যে, আজকাল মানুষ তার কথার শতকরা ৬০ ভাগ নিজের সম্পর্কে "বকরবকর" করে, আর ৮০ শতাংশ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় চ্যাট করার সময়। কেন বলে? ভাল লাগে তাই বলে। নিজের কথা বলতে কার খারাপ লাগে বলুন! এমনও আছে, প্রাণ খুলে নিজের কথা বলার সময় মানুষ স্থান, কাল পাত্র ভুলে প্রয়োজনে অর্থের বিনিময়ে কথার ঝাপি খুলে দিতে ভালবাসে। বেশ বড় সমস্যাই বটে! আর এই কথা বলার প্রবণতা আমাদের সমষ্টিগত এককালীন মনোযোগের সময়কালকেও কমিয়ে দিচ্ছে বেশ... যা ৮ সেকেন্ডের বেশি নাও হতে পারে।


একটা আদর্শ কথোপকথনের মধ্যে 'আধেকটা আমার, আধেকটা আপনার মশাই' এই রীতিতে কথা চলতে পারে। আর সত্যি কথা বলতে কি, একটু চুপচাপ থাকলে যা বলা হয় আর যা বলা হচ্ছে না, তার দুটোই আপনি ধরতে পারবেন। 

মার্ক গোলস্টোন, একজন সাইক্রিয়াট্রিস্ট হিসেবে কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার জন্য কথা বলার তিনটি স্তরেই মনোযোগ ধরে রাখতে বলেছেনঃ

  • কজের কথা, মানে এ কথাগুলোই আপনার সাথে তার কার্যকলাপের সংযোগস্থাপন করে,
  • 'উজাড় করে দিলাম' স্তর, মানে যেখানে আপনি কথা বলতে আরাম পাচ্ছেন, এবং মনপ্রাণ খুলে কথা বলছেন,
  • অফ ট্র্যাক স্টেজ, অর্থাৎ আপনি এখন আপনার কথা বলা না থামিয়ে (বা অন্যজনের কথা না শুনে) অফ-টপিক একটা বেছে নিলেন।
এখন মনে হতে পারে, যাহ্‌, কোন দুঃখে আমার এরকম হতে যাবে? হতে পারে, কারণ কথা বললে আপনি এক রকমের স্বস্তি অনুভব করতে পারেন। কষ্টের ভাগ দিতে পারলে ভাল লাগে আমাদের, প্রেমের সুখের কথা শোনাতে পারলেও ভাল লাগে আমাদের, এমনকি, আজকের বাজার করার সময় মাছের ফুলকা দেখে মাছ কিনে কিভাবে জিতে গিয়েছেন, সেটাও আপনার বলতে ভালই লাগে।


আবার মাঝে মাঝে আমাদেরকে কাজের খাতিরেই প্রমাণ করতে হয়, কথা বলতে হয়, নিজেকে উপস্থাপন করতে হয়, তখনই দেখা যায় আমাদের অপরিচিত পরিবেশে আমাদের পরিচিত বিব্রতবোধ এসে উকি দেয়। ফলাফল- অযথা কথা বেরিয়ে যায় মুখ দিয়ে। কথার শেষ হয় না, উলটো বিরক্তিরও শেষ হয় না।

করবটা কি তবে?

করার উপায় অবশ্যই আমাদের হাতেই আছে। কঠিন কিছু নয়। গোলস্টোন এক্ষত্রে ট্রাফিক সিগন্যাল ফরমুলা দিয়েছেন, অর্থাৎ আপনি কখন থামবেন, সেটা আপনিই ঠিক করতে পারবেন।

  1. সিগন্যাল ১; সবুজ বাতি- একটানা ৩০ সেকেন্ড বলে যান আপনার কথা। প্রশ্ন করুন, হাসিমুখে তার কাছে জিনিষটি অবহিত করুন।
  2. সিগন্যাল ২; হলুদ বাটি- অর্থাৎ এবার একটু সাবধানে, মানে কথা পরের ২০ সেকেন্ডের মধ্যে শেষ করে বা অন্যকে বলতে সুযোগ করে দেয়াই ভাল। শ্বাস নিন, ভাল লাগবে।
  3. সিগন্যাল ৩; লাল বাতি- মানে, 'থামলে ভাল লাগে! থামেন!' বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, ঠিক এই লেভেলে এসেই আপনার কথার প্রতি আমার মনোযোগ কমে যাবে। কাজেই থেমে যান, নতুবা বিপদে পড়লেন। 

 তবে একটা কথা আগে থেকেই বলে রাখি, যেকোন কথোপকথনের আগেই আপনাকে বুঝতে হবে আপনি সেটার সম্পর্কে জানেন কিনা, আর সেটা সম্পর্কে অপর ব্যক্তিও অবহিত আছেন কিনা। প্রথমে হালকা কথাবার্তা চালিয়ে নিন নার্ভাস্‌নেস কাটানোর জন্য। আপনি নার্ভাস হতে পারবেন না, তা নয়। কিন্তু পরিবেশ হালকা হলে কথা বলতে ভালই লাগবে।

আর মোদ্দা কথা , কথা বলতে পারাটাই আপনার সাফল্য নয়, কথা শুনে সেটাকে অনুধাবন করতে পারাটাই বড় বিষয়। কজনই বা সেটা পারে বলুন!

এই লেখার সর্বস্বত্ব লেখকের ।এই লেখা লেখকের অনুমতি ব্যাতীত প্রকাশ,মুদ্রণ,অনুলিখন কিংবা কোন রচনায় প্রকাশ করিলে লেখক আইনানুগ ব্যাবস্থা নিতে বাধিত হইবেন।লেখকের মৃত্যুর পর লেখাগুলির সর্বস্বত্ব লেখকের পরিবারের।

No comments:

ঘুমনামা

মাঝে মাঝে মনে হয় আমি একা বসে আছি। একটা খালি মাঠের এক কোনে, বিলের পাশের নিচু ঢালে। শুয়েও পড়তে পারি, যদি ইচ্ছে হয়। তারপর কি করব জানি না। আমি অ...