Sunday, February 14, 2016

কা-কথা

"কাক"

কেমন লাগে দেখতে? দেখা যায় আজকাল?


ইদানীং সকালে উঠে যতগুলো কাক দেখা যায়, তার চেয়ে বেশি দেখা যায় ভোরের ব্যস্ত গাড়ি, আর সেগুলোতে বসে থাকা ঘুমন্ত মানুষগুলোকে। আজকাল কাকগুলো প্রকট শব্দে ডাকে না অভিজাত রাস্তায়। খুঁজে পাওয়া যায় না মাঝদুপুরে একলা কাকের চুপচাপ বসে থাকা, কিংবা প্রবল বৃষ্টিতে চিলেকোঠার ছাদে ভাবলেশহীন একলা ভিজে যাওয়া। কাকের আজ ভীষণ অভাব দেখা যাচ্ছে এশহরের কংকালময় দালানকোঠার জমানো পঙ্কিলতা মাখা জীবনে।

কাক কিন্তু বেশ চালাক প্রাণী। ছোটদের গল্পের বইয়ের পাতায় কিংবা কর্পোরেট বিজ্ঞাপনে কাকের বুদ্ধি কেবল পানি খাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু কাক আমাদের জানার বাইরের আর এট্টু বেশি বুদ্ধিমান বটে। এমনকি এরা শিম্পাঞ্জী আর ডলফিনদের সাথেও বুদ্ধির জোরে পাল্লা দেয়। কাকের খাবারে কেউ ভাগ বসাতে পারে না। কাউকে খাবারের কাছে দেখলেই 'আজ তোর একদিন নয়ত আমার'- বলে তাড়াতে আসবে ঠোট উচিয়ে। বন্য কাক মানুষকে তার বাসার ধারে কাছেও ঘেষতে দেয় না, মাছ চুরি করে খেতে ওস্তাদ, আর মরার পাশে শুয়ে মরার ভান করার রেকর্ডও আছে এদের।

সাধের ময়না-টিয়া আপনার শেখানো বুলি বলতে পারে সে বিষয়ে আমাদের অবি সাহিত্যিকদের সাথে আমার কোন বিতর্ক নেই। তবে কাকও যে কথা কইতে পারে, সে বিষয়ে আমি গ্যারান্টি দিতেই পারি। এই ভিডিওটা আমাদের রাজশাহীতেই করা, তাতে কাকটা যা বলছে, তা বেশ বোধগম্য এবং সুরধন্যও বটে!



ইউরোপে কাক ছদ্মবেশী শয়তানের আরেক নাম। মানে ব্যাপারটা এইরকম যে, কাকের চোখ ভেদ করে যাওয়া চাউনি আর যাই হোক রক্তমাংসের পুচ্ছময় অশুভ আত্মার কথা মনে না করিয়ে দিয়ে পারেই না। ফ্রান্সে কাক হলো দুষ্ট পুরোত আর সেবিকাদের আত্মা বয়ে বেড়ানো পাখি। জার্মানীতে সে হয়ে গেছে শয়তান আর দুষ্ট আত্মার বাহক। সুইডেনে সেসব কাকই রাতে ডাকে, যেগুলো কিনা অপঘাতে মরে যাওয়া মানুষগুলোর আত্মা বয়ে বেড়ায়। আর ডেনমার্কে মানুষ ভুলেও রাতে কাকের দিকে চোখ তুলে তাকায় না, কারণ কাকের পাখনায় যদি একটা ফুটো থাকে, আর তা যদি দেখতে পান, তবে আপনার কাক হয়ে যাওয়া সময়ের ব্যপার মাত্র!

কাক কোন মিথের মধ্যে জায়গা করে নেয় নাই তাই বলুন! কি তিব্বত আর কি গ্রীস- সব জায়গাতেই কাক ঈশ্বরের বার্তাবাহক ছিল। সেলটিক দেবীরা তো যুদ্ধে কাকের রূপ নিয়ে আবির্ভূত হতেন। ভাইকিং রাজার দুটো কাক ছিল; হুগুইন(চিন্তা) আর মুনিন(স্মৃতিশক্তি)। এদের কাজ ছিল যুদ্ধক্ষত্রের দৈনন্দিন খবরাখবর নিয়ে প্রতিবেদন পেশ করা। চৈনিক দেবতারা নাকি কোন এলাকার উপর দিয়ে যাবার সময় কাক পাঠিয়ে সাবধান করতেন। লোন রেঞ্জার দেখেছেন? নেটিভ আমেরিকানরা আসলেই কাককে দেবতা হসেবে মানত।

এগুলো না মানলেও কিচ্ছু যায় আসে না কাকেদের। কাক বেশ চালাক প্রানী, খেলতে ভালবাসে, নিজেদের মধ্যে দলগত মিথস্ক্রিয়া বজায় রাখে। যুদ্ধ করে, যুদ্ধে হারলে বন্ধুর প্রতি মায়া দেখায়,আর জোড়ায় জোড়ায় ঘর বাধে। আর খাবার নিয়ে বাছবিচার নেই, তাই যত্ন-আত্মির বালাই নেই শহরবাসীর।

তবে এরা হারিয়ে যাচ্ছে কেন?

থাক, পরিবেশ নিয়ে কথা আরেকদিন বলবো।তার আগে, এডগার অ্যালেন পো'র ''দ্য র‍্যাভেন'' এর দুটো লাইন বলে যাই-

And the Raven, never flitting, still is sitting, still is sitting
On the pallid bust of Pallas just above my chamber door;
And his eyes have all the seeming of a demon's that is dreaming,
And the lamplight o'er him streaming throws his shadow on the floor;
And my soul from out that shadow that lies floating on the floor
Shall be lifted - nevermore!
     


এই লেখার সর্বস্বত্ব লেখকের ।এই লেখা লেখকের অনুমতি ব্যাতীত প্রকাশ,মুদ্রণ,অনুলিখন কিংবা কোন রচনায় প্রকাশ করিলে লেখক আইনানুগ ব্যাবস্থা নিতে বাধিত হইবেন।লেখকের মৃত্যুর পর লেখাগুলির সর্বস্বত্ব লেখকের পরিবারের।

No comments:

ঘুমনামা

মাঝে মাঝে মনে হয় আমি একা বসে আছি। একটা খালি মাঠের এক কোনে, বিলের পাশের নিচু ঢালে। শুয়েও পড়তে পারি, যদি ইচ্ছে হয়। তারপর কি করব জানি না। আমি অ...