Thursday, May 31, 2012

শহুরে কথকতা-২: "ওস্তাদ, নামবার আচ্ছে!"

লাকা বাসের হেলপারের প্রচলিত কথাগুলো আয়ত্ত করাটা সহজ নয়। আমি আজ পর্যন্ত একটাও ভাল করে বলতে পারি নাই।তবে নামার সময় একটা অদ্ভুত ডাক চলে আসে, সেটা পুরোন ঢাকার অচেনা সুর হতে পারে। হেলপাররাও মাঝে মাঝে বলে থাকে। ডায়লগটা হলো, " ওস্তাদ, নামবার আচ্ছে!!"


সকাল বেলা ঘুম ঘুম চোখে ঢাকার এমাথা থেকে ওমাথার দিকে রওনা দেই, তখন শহরের সবচে পরিচিত পরিবেশ আমার জন্য একটাই-বলাকা বাস। একসময় এই বাসটাতে আমি উঠতাম না। হালকা নাক উচুঁ ভাব ছিল বলা যেতে পারে।কিন্তু আশেপাশের পরিবেশ, আর নিজের চেনা গন্ডির বাইরে মাথা বের করে উঁকি দেয়া শুরু হতেই ঢাকার এই পরিচিত রূপের মধ্যে ঢুকে যেতে শুরু করলাম।

সবচে মজার ব্যাপার হল, এই বলাকা কিংবা এইরকম বাসগুলোতে উঠলে প্রথম প্রথম আমার ভাড়া দেয়া লাগত না। আমি মাঝে মাঝে চাইতাম দিতে, কিন্তু বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে যেসব কাজ করা যেতে পারে, সেগুলো ভেবে অনেক সময় দিতাম না (অপরাধ শিকার করছি...)।

কখনো বাসের হ্যন্ডেলটাকে নিজের বইপত্তরের চাইতেও আপন করে ধরে রেখে , কখনো বা ঝুলে ঝুলে কোনওমতে নিজের সহ্যশক্তির পরীক্ষা নিতে নিতে যখন নিজের গন্তব্যে পৌছানো যায়, ততক্ষণে যে ক্লাস শুরু হয়ে যাবে, সেটা একদম হলফ করে বলা যাবে। সকালের ঘুম তখনো কাটে না, রাজ্যের ক্লান্তি আর ঘুমের ভারে নিজের বইগুলো আর বন্ধুর হাত একখানি নরম বালিশের চেয়েও অনেক আরামদায়ক হয়।

ঢাকার বিশাল জ্যামের আশীর্বাদে আমার দিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটছে এই বাসে চড়ে। একই রুটে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করলে একটা বিরক্তি তো কাজ করেই। কিন্তু নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটা বিশাল অংশের চলা-ফেরা, চিন্তা-ভাবনা দেখার কারণেই বোধহয় আমি আজো আসা-যাওয়া করছি নির্বিকার ভাবে। সকালের চাকুরিজীবীদের পরিচিত রাজনৈতিক কড়চা,অযথা বাসভাড়া নিয়ে কথা বলতে বলতে সরকারের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শাপ-শাপান্ত করা, কিংবা হুড়মুড় করে ওঠা নিচুশ্রেনীর মানুষের উচ্চস্বরের বসচা দেখতে দেখতে আমি আমার গন্তব্যে পৌছে যাচ্ছি দিনদিন।

অসচেতন ড্রাইভার কাম হেলপারদের অসতর্ক গাড়ি চালানোর জন্য তেমন বড় কিছু এখনো দেখতে হয় নি বলে ভাগ্যবান। তবে বলাকার পিছনে বসা ছেড়ে দেব ভাবছি। এরা নিজেদের কর্কশ ভেঁপুর অনুপস্থিতিতে নিজেদের গাড়িগুলোকে ধাক্কা দেয় বারবার। এতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে-সেটা ছাড়াও আমার হালকা ঝিমুনি ভাবটাও কেটে যায়। সে অবস্থার অনুভূতি কেমন হতে পারে , সেটা আমার মত ঘুমকাতুরে মানুষ ছাড়া বোঝান মুশকিল।

ঘুমুতে যাব। ঘুমানোর আগে একটা গতিময় গানের লিঙ্ক দিলাম। 

 

গতিময় ঢাকায় জীবন কিছুক্ষণের জন্য হলেও মধুর হোক!

বিঃদ্রঃ আপনাদের কমেন্ট আমার এই রাতজাগাকে আনন্দময় করে!





এই লেখার সর্বস্বত্ব লেখকের ।এই লেখা লেখকের অনুমতি ব্যাতীত প্রকাশ,মুদ্রণ,অনুলিখন কিংবা কোন রচনায় প্রকাশ করিলে লেখক আইনানুগ ব্যাবস্থা নিতে বাধিত হইবেন।লেখকের মৃত্যুর পর লেখাগুলির সর্বস্বত্ব লেখকের পরিবারের।

ঘুমনামা

মাঝে মাঝে মনে হয় আমি একা বসে আছি। একটা খালি মাঠের এক কোনে, বিলের পাশের নিচু ঢালে। শুয়েও পড়তে পারি, যদি ইচ্ছে হয়। তারপর কি করব জানি না। আমি অ...